চালকের আসনে মুনীর, সেনা-সরকারের হাইব্রিড সিস্টেম; পাকিস্তানে নিজ সরকারের ওপর প্রশ্ন

চালকের আসনে মুনীর, সেনা-সরকারের হাইব্রিড সিস্টেম; পাকিস্তানে নিজ সরকারের ওপর প্রশ্ন

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী এবং সরকারের জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাকিস্তানি গণমাধ্যমে এর তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। পাকিস্তানি সংবাদপত্র ‘ডন’ (Dawn) এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। উল্লেখ্য, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীর (Asim Munir) সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের (Donald Trump) সাথে মধ্যাহ্নভোজনে গিয়েছিলেন।

পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ (Khawaja Asif) এর প্রশংসা করেছিলেন। তিনি এটিকে একটি হাইব্রিড সিস্টেম (Hybrid System) উল্লেখ করে টুইটও করেছিলেন। এই নিয়ে খাজা আসিফ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। সেনাবাহিনী এবং সরকারের জোটের প্রশংসা করায় পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নিজ দেশেই কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রশ্ন উত্থাপন
এরই মধ্যে ‘ডন’ সংবাদপত্র তাদের সম্পাদকীয়তে মন্ত্রীর এই মন্তব্যের উপর প্রশ্ন তুলেছে। সংবাদপত্রটি লিখেছে যে, মন্ত্রী এই মডেলের প্রশংসা এমনভাবে করছেন যেন এটি কোনো সম্মানের বিষয়। খাজা আসিফ তার এক্স (পূর্বে টুইটার) পোস্টে লিখেছিলেন যে, পাকিস্তানের উন্নত পরিস্থিতি ইসলামাবাদ (Islamabad) এবং রাওয়ালপিন্ডির (Rawalpindi) মধ্যে উন্নত সম্পর্কের ফল। উল্লেখ্য যে, ইসলামাবাদ পাকিস্তানের রাজধানী এবং রাওয়ালপিন্ডি সেনা সদর দফতর। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। মানুষ খাজা আসিফের কথার অর্থ বের করতে শুরু করে। কিছু লোক তো এই পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করেছে যে, এই কথা কি সেই ব্যক্তি বলেছেন, যার দল কিছুদিন আগে বেসামরিক শ্রেষ্ঠত্বের (Civilian Supremacy) স্লোগান তুলেছিল?

৯০ দশকের উদাহরণ
পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ‘আরব নিউজ’-এর (Arab News) সাথে এক সাক্ষাৎকারেও এই হাইব্রিড সরকারের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এটি আদর্শ গণতান্ত্রিক সরকার না হলেও এটি অলৌকিক কাজ করছে। অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা বিবেচনা করে তিনি এটিকে পাকিস্তানের জন্য আদর্শ সরকার বলেছেন। খাজা আসিফ এ পর্যন্ত বলেছেন যে, যদি ১৯৯০ এর দশকে এমন মডেল গ্রহণ করা হতো – যেখানে নওয়াজ শরীফ (Nawaz Sharif) দু’বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাহলে পরিস্থিতি অনেক ভালো হতো। তিনি বলেন যে, সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক সরকারের মধ্যে সংঘাত গণতন্ত্রের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।

স্বার্থসিদ্ধি করছে দলগুলো
এখন পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা সেখানকার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কথার অর্থ বের করছেন। ডক্টর রসুল বকশ রইস (Dr. Rasul Bakhsh Rais) ‘ডন’ কে বলেছেন যে, আসলে এটি দেশের তৃতীয় হাইব্রিড সরকার। তিনি বলেছেন যে, পার্থক্য হলো জেনারেল জিয়াউল হক (General Zia-ul-Haq) এবং জেনারেল মোশাররফ (General Pervez Musharraf) প্রধান দলগুলোকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফ্রন্ট তৈরি করেছিলেন। এবার দুটি প্রধান দল স্বেচ্ছায় রাজনৈতিক মুখোশের কাজ করেছে। ডক্টর রইস এর পেছনের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, সেনাবাহিনীর সমর্থন দিয়ে পিএমএল-এন (PML-N) এবং পিপিপি (PPP) তাদের স্বার্থসিদ্ধি করছে। প্রথমত, তারা তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা (Corruption Cases) থেকে মুক্তি চায়। একই সাথে তারা ইমরান খান (Imran Khan)-এর রূপে এক উদীয়মান বিরোধীকে দমন করতেও সফল হচ্ছে। তিনি বলেছেন যে, এরা সবাই মিলে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআইকে (PTI) উত্থান করতে দিতে চায় না।

বিশ্লেষকরাও বিস্মিত
পাকিস্তানি বিশ্লেষকরাও ট্রাম্প এবং মুনীরের সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের (Shehbaz Sharif) অনুপস্থিতিতে বিস্মিত। ডক্টর রসুল বকশ রইস বলেছেন যে, শাহবাজ শরীফের এখানে না থাকা অনেক কিছু স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিশ্বের সামনে এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ক্ষমতার কেন্দ্রে কে আছে। পুরো নিয়ন্ত্রণ কার হাতে। কিন্তু আরেকজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আহমেদ বিলাল মাহবুব (Ahmed Bilal Bilal Mehboob)-এর ভাষায়, আসিফই প্রথম ব্যক্তি নন যিনি ‘হাইব্রিড সরকারের’ কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যে, ইমরান খান বারবার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যেমন – প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ এবং বাজেট পাশের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্বীকার করেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *