আশঙ্কা সত্যি হলো, পারমাণবিক নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার পর পাকিস্তান সাহায্যের জন্য আকুতি জানিয়েছিল

আশঙ্কা সত্যি হলো, পারমাণবিক নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার পর পাকিস্তান সাহায্যের জন্য আকুতি জানিয়েছিল

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার কৃতিত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমাগত নিতে চেয়েছেন, কিন্তু আসল সত্য এখন সামনে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার-এর মুখ থেকে সেই কথা বেরিয়ে এসেছে, যা সবাই জানত কিন্তু কেউ নিশ্চিত করছিল না।

যদি এই কথাগুলো ভারতের পক্ষ থেকে বলা হতো, তাহলে কেউ তা বিশ্বাস করতে পারত না। কারণ ভারতে বিরোধীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি নিয়ে সরকারের ওপর ক্রমাগত আক্রমণাত্মক। আশা করা যায় যে, ইসহাক দারের বিবৃতির পর ভারত ও পাকিস্তানে এখন আর কেউ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই কথায় বিশ্বাস করবে না যে, যুদ্ধবিরতি তার বাণিজ্য চুক্তির ফলে সম্ভব হয়েছিল।

অপারেশন সিন্দুর: পাকিস্তানের উপর ভারতীয় হামলার তীব্রতা
অপারেশন সিন্দুর-এর পরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা, বিশেষ করে অপারেশন সিন্দুরের অধীনে ভারতীয় বিমান বাহিনী কর্তৃক নূর খান এবং শোরকোট বিমান ঘাঁটিতে চালানো নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির (Ceasefire) জন্য বাধ্য করে। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার-এর সাম্প্রতিক এই প্রকাশ এই হামলাগুলোর গুরুত্ব এবং পাকিস্তানের হতাশা তুলে ধরেছে।

অপারেশন সিন্দুরের সূত্রপাত হয় ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে (Pahalgaon) ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার জবাবে, যেখানে ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছিল। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ (Jaish-e-Mohammed) এবং লস্কর-ই-তৈয়বা (Lashkar-e-Taiba)-কে দায়ী করেছিল। ভারত এই হামলার জবাবে ৬-৭ মে রাতের বেলায় ব্রাহ্মস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র (BrahMos supersonic missiles) এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এর ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটির পাশাপাশি নূর খান (রাওয়ালপিন্ডি) এবং শোরকোট (ঝাং, পাঞ্জাব) বিমান ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়। বলা হয় যে, নূর খান বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার মজুদও লুকিয়ে রাখা আছে। এই বিমান ঘাঁটিটি পাকিস্তানের পারমাণবিক কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থারও অংশ, কারণ এটি কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগ (Strategic Plans Division) এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডারের কাছাকাছি অবস্থিত। ভারত তাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্ভুল নিশানায় আঘাত হেনে পাকিস্তানের পারমাণবিক সুরক্ষাব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। এই কথাটি অনেক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞও নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু পাকিস্তান বা ভারত এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।

ইসহাক দারের স্বীকারোক্তি: পাকিস্তানের অসহায়তা
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জিও নিউজ-এর (Geo News) কাছে ২০ জুন ২০২৫-এর এক সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন যে, ভারতের হামলা ৭ মে সকালে ২:৩০ মিনিটে শুরু হয়েছিল। দার এই সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন যে, এই হামলায় পাকিস্তান সম্পূর্ণ হতবাক হয়ে গিয়েছিল। দার এও স্বীকার করেন যে, নূর খান এবং শোরকোট বিমান ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ-ও স্বীকার করেছিলেন যে, পাকিস্তানের হামলার আগেই ভারত আক্রমণ করেছিল এবং তাদের প্রস্তুতি ভেস্তে গিয়েছিল।

ইসহাক দার বলেন যে, হামলার ৪৫ মিনিট পর সৌদি যুবরাজ ফয়সাল বিন সালমান (Faisal bin Salman) তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন যে, তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর (S. Jaishankar)-এর সাথে কথা বলতে পারেন কি না। দারের সম্মতির পর সৌদি আরব যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা শুরু করে। এর অর্থ হলো, দারের আকুতির পর সৌদি যুবরাজ ভারতের কাছে পাকিস্তানের অনুরোধের কথা জানান। দার এই কথা বলতেও কোনো দ্বিধা করেননি যে, পাকিস্তান আমেরিকার কাছেও হস্তক্ষেপের জন্য আকুতি জানিয়েছিল।

দারের এই প্রকাশ পাকিস্তানের হতাশা এবং বাধ্যবাধকতাকে তুলে ধরে। অথচ এর ঠিক উল্টোদিকে পাকিস্তানে ক্রমাগত প্রচার করা হচ্ছিল যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতকে পরাজিত করেছে। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের অনেক মানুষ লিখছিলেন যে, নূর খানের ধ্বংসযজ্ঞ পাকিস্তানকে নতজানু করে দিয়েছে। এভাবে পাকিস্তান স্বীকার করেছে যে, ভারতীয় হামলা পাকিস্তানের পারমাণবিক কমান্ডকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিল। দার বলেছেন যে, এরপর সেনা প্রধান আসীম মুনীর মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও (Marco Rubio)-কে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *