ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে আমেরিকার প্রবেশ, এবার চীন ও রাশিয়া কী করবে?

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে আমেরিকার প্রবেশ, এবার চীন ও রাশিয়া কী করবে?

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে এবার সরাসরি আমেরিকাও জড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘাতের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন, এবং অনেকেই অনুমান করছিলেন যে আমেরিকা এই যুদ্ধে প্রবেশ করতে পারে। সেই আশঙ্কা সত্যি করে শনিবার আমেরিকা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে। আমেরিকার এই পদক্ষেপের পর আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, চীন ও রাশিয়া এখন কী করবে?

চীনের প্রতিক্রিয়া: নিন্দাসূচক মন্তব্য ও সতর্কবার্তা
মার্কিন হামলার পর চীনের প্রথম প্রতিক্রিয়া সামনে এসেছে। চীন ইরানের ওপর আমেরিকার এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একই সাথে চীন সতর্ক করে বলেছে যে, আমেরিকা অতীতের কৌশলগত ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি করতে পারে। ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে যে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ প্রায়শই বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনে।” চীন আরও বলেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য সামরিক পদক্ষেপের চেয়ে কূটনীতি ও আলোচনা অনেক বেশি কার্যকর।

এর আগেও চীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইসরায়েল-ইরান সংকট উসকে দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল। চীন বলেছিল যে, ইরান-ইসরায়েল হামলায় আমেরিকা ‘তেল ঢেলে’ (অর্থাৎ উসকানি দিয়ে) পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে। চীনের সরকারি গণমাধ্যম অনুসারে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সকল পক্ষের, বিশেষ করে ইসরায়েলকে, হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

রাশিয়ার অবস্থান: পূর্ব সতর্কতা ও মধ্যস্থতার প্রস্তাব
অন্যদিকে, রাশিয়া এখনও পর্যন্ত ইরানের ওপর আমেরিকার হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, তারা আগেই আমেরিকাকে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে “সামরিক হস্তক্ষেপ” থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সভাপতি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা “চেরনোবিল-স্টাইলের বিপর্যয়” ডেকে আনতে পারে। এর আগে, পুতিন এই সংঘাতের সমাধানের জন্য ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন যে, পুতিনের উচিত প্রথমে ইউক্রেন নিয়ে মধ্যস্থতার দিকে মনোযোগ দেওয়া।

তবে, রাশিয়া এর আগে আমেরিকা ও ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছিল যে, যদি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইকে হত্যা করা হয়, তবে এর বিশ্বজুড়ে গুরুতর ও বিপজ্জনক পরিণতি হবে। স্কাই নিউজ অনুসারে, ক্রেমলিন বলেছে যে, ইরানের নেতাকে সরানোর যেকোনো প্রচেষ্টা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত খারাপ করে তুলতে পারে।

চীন ও রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ
আমেরিকার ইরানের ওপর হামলার পর এখন প্রশ্ন উঠছে যে, এই দুটি দেশ কী করবে। তারা কি সরাসরি ইরানের পক্ষ নেবে? যদিও এই প্রশ্নের কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখনও দুই দেশের পক্ষ থেকে আসেনি। দুটি দেশই ইরান-ইসরায়েলকে সংযম बरतতে বলতে পারে। তবে, রাশিয়া এবং চীন চুপচাপ কূটনৈতিকভাবে ইরানকে সমর্থন করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনে এই দুটি দেশের কৌশল কী হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *