ইরানের ওপর বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্রে বিপাকে ট্রাম্প, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্টে পদক্ষেপের প্রস্তুতি

ইরানের ওপর বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্রে বিপাকে ট্রাম্প, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্টে পদক্ষেপের প্রস্তুতি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আমেরিকা কর্তৃক বিমান হামলার পর দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতারা রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে নিশানা করে বলেছেন যে, তাকে জনগণ এবং সংসদের কাছে তার সিদ্ধান্তের পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট জবাব দিতে হবে।

বিরোধী সংসদ সদস্যরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে আমেরিকাকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্রেটিক সাংসদ রো খান্না কংগ্রেসের সকল সদস্যকে অবিলম্বে ওয়াশিংটনে ফিরে আসার এবং রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামরিক ক্ষমতা সীমিত করার জন্য তার প্রস্তাব ‘ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট’-এর উপর ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। ইরানের উপর আমেরিকার বিমান হামলা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকও হওয়ার কথা রয়েছে।

সিনেটের ডেমোক্রেটিক নেতা চক শুমার তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, “কোনো প্রেসিডেন্টের একতরফাভাবে আমেরিকাকে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক, যার ফলে আমেরিকা নিজেই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।” মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রো খান্নাও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য কংগ্রেসের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, এখন পর্যন্ত তার প্রস্তাব ৪৭ জন ডেমোক্র্যাট সাংসদের সমর্থন পেয়েছে। তার লক্ষ্য হল, সপ্তাহান্তের মধ্যে ২১৩ জন ডেমোক্র্যাট এই প্রস্তাবকে সমর্থন করবেন।

রো খান্না সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “এটি ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমাদের ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আমি আজ রাতে চিঠি পাঠাচ্ছি এবং প্রতিটি সংসদ সদস্যকে আমার এই বিল সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করছি।”

আমেরিকার ‘যুদ্ধ শক্তি আইন’ কী?
আমেরিকায় ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট (যুদ্ধ শক্তি আইন) একটি আইনি বিধান, যা আমেরিকান কংগ্রেস ১৯৭৩ সালে পাস করেছিল। এর উদ্দেশ্য হল, নিশ্চিত করা যে রাষ্ট্রপতি একতরফাভাবে আমেরিকাকে যুদ্ধে ঠেলে দিতে না পারেন এবং যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের জন্য কংগ্রেসের অনুমতি প্রয়োজন। এই আইন ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর তৈরি করা হয়েছিল, যখন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমতি ছাড়াই হাজার হাজার সৈন্যকে যুদ্ধে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এতে আমেরিকান জনগণ এবং সংসদে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয় এবং রাষ্ট্রপতির সামরিক ক্ষমতা সীমিত করার দাবি ওঠে। যদি রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া সেনাবাহিনী কোনো বিদেশী অভিযানে পাঠান, তাহলে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে এর সম্পূর্ণ তথ্য জানাতে হয়।

ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা
আসলে, ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বি-২ বোমারু বিমানগুলি ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের মতো সংবেদনশীল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালিয়েছে। ডেমোক্র্যাট নেতাদের ধারণা যে, এই পদক্ষেপের ফলে একটি ব্যাপক এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিনিধি পরিষদের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেছেন যে, “রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই মার্কিন সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এই পদক্ষেপ আমেরিকার জনগণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এবং পুরো অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।”

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক
ইরানের উপর আমেরিকা কর্তৃক বিমান হামলার পর বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) রবিবার একটি জরুরি বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলা, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা এবং সম্ভাব্য বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হবে। রাশিয়া, চীন এবং ফ্রান্সের মতো স্থায়ী সদস্যরা আমেরিকার কাছ থেকে জবাবদিহিতা চাইতে পারে। এই ইস্যুতে UNSC-তে তীব্র বিতর্ক এবং নিন্দা প্রস্তাব আনার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আমেরিকা কর্তৃক ইরানের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এই ধরনের পদক্ষেপ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *