১৫ মিনিটে বিনিয়োগকারীদের ₹৩ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি, বাজার পতনের ৪ কারণ

দুর্বল বৈশ্বিক সংকেত এবং ব্যাপক বিক্রির কারণে ভারতীয় শেয়ারবাজার সোমবার সকালের বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সেনসেক্স ৯০০ পয়েন্টের বেশি কমে ৮১,৪৮৮ স্তরে নেমে এসেছে, যেখানে নিফটি ৫০-ও ২৪,৮৫০ এর নিচে নেমে যায়।
সেনসেক্স তার আগের বন্ধ স্তর ৮২,৪০৮.১৭ এর তুলনায় ৮১,৭০৪.০৭ এ দুর্বল শুরু করে এবং দিনের সর্বনিম্ন স্তর ৮১,৪৮৮.৫৪ তে পৌঁছায়, অর্থাৎ ১% এর বেশি পতন। নিফটি ৫০-ও তার আগের বন্ধ স্তর ২৫,১১২.৪০ এর তুলনায় ২৪,৯৩৯.৭৫ এ শুরু করে এবং ১% এর বেশি কমে ২৪,৮৩৪.৫৫ এর সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছায়। বিএসই মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ সূচকও প্রায় ১% করে পতনের সাথে লেনদেন করছিল।
বিনিয়োগকারীদের ধাক্কা: ₹৩ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি
বিএসইতে তালিকাভুক্ত কো ম্পা নিগুলির মোট বাজার মূলধন আগের সেশনে প্রায় ₹৪৪৮ লাখ কোটি থেকে কমে প্রায় ₹৪৪৫ লাখ কোটি হয়েছে। এর অর্থ হলো, শুধুমাত্র প্রথম ১৫ মিনিটের লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ₹৩ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাজার পতনের প্রধান কারণ
১. ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ: ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি বাজারের মনোভাবকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এতে সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে যে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হবে না। শনিবার আমেরিকা ইরানের উপর আকস্মিক হামলা চালিয়ে তার তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে নতুন মোড় এসেছে।
জিওজিট ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ ভি কে বিজয়কুমার বলেছেন, “যদিও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বোমাবর্ষণ পশ্চিম এশিয়ার সংকটকে আরও গভীর করেছে, তবে বাজারের উপর এর প্রভাব সীমিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন অনিশ্চয়তার মূল কারণ হলো ইরানের প্রতিক্রিয়ার সময় এবং প্রকৃতি। যদি ইরান এই অঞ্চলে মার্কিন প্রতিরক্ষা সুবিধা বা মার্কিন সামরিক কর্মীদের গুরুতর ক্ষতি করে, তাহলে মার্কিন প্রতিক্রিয়া বড় হতে পারে এবং এতে সংকট আরও বাড়তে পারে।”
২. হোরমুজ প্রণালী বন্ধ করার ইরানের হুমকি: মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ হোরমুজ প্রণালী বন্ধ করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এটি বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পথ। ব্লুমবার্গের মতে, বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ প্রতিদিন এই পথ দিয়ে যায়। হোরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে, তেলের দাম আকাশচুম্বী হবে এবং ভারতের মতো প্রধান তেল আমদানিকারক দেশগুলির অর্থনীতিতে গুরুতর ক্ষতি হবে।
৩. অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি: বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের উপরে অপরিশোধিত তেলের দাম দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে তা ভারতের আর্থিক লক্ষ্যের (ফিসকাল ম্যাথ) জন্য নেতিবাচক হবে এবং এর বাণিজ্য ঘাটতি বাড়িয়ে দেবে। উচ্চ অপরিশোধিত তেলের দাম মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে, রুপিকে দুর্বল করতে পারে, কো ম্পা নিগুলির উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে এবং তাদের মুনাফার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৪. তেল ও রুপির উপর প্রভাব: শনিবার আমেরিকা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে সোমবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ২% এর বেশি বেড়েছে এবং এটি প্রতি ব্যারেল ৭৯ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। একই সময়ে, ভারতীয় রুপি সোমবার সকালের বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১৭ পয়সা কমে ৮৬.৭২ প্রতি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের কী করা উচিত?
বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি করার পরিবর্তে সতর্ক থাকতে এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। তেলের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে তেল বিপণন সংস্থাগুলির (OMCs) শেয়ারের উপর চাপ রয়েছে। আগামী দিনে ইরানের প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারের কার্যকলাপের উপর নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ হবে।