ইসরায়েলে ভারতীয় শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবার, বলছেন – ‘এবার ফিরে এসো’

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রায় ১০ দিন ধরে হামলা চলছে।
গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটি এবং অন্যান্য সামরিক কেন্দ্রে হামলা শুরু করে।
এরপর ইরানও ইসরায়েলের উপর পাল্টা হামলা শুরু করে। এই হামলাগুলিতে উভয় দেশই একে অপরের ক্ষতি করেছে, যেখানে অনেক মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। আপাতত উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে।
ইরান ইসরায়েলের তেল আভিভ এবং হাইফা বন্দরেও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েল ও ইরানে ভারতীয়রা
ইসরায়েলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয় শ্রমিকরা কাজ করেন (ফাইল ছবি)।
ইরান এবং ইসরায়েল উভয় দেশেই ভারতীয় নাগরিকরা আটকা পড়েছেন।
ভারত ইরান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ‘অপারেশন সিন্ধু’ শুরু করেছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে বর্তমানে আকাশপথ বন্ধ রয়েছে। তাই ইরান থেকে আর্মেনিয়ার মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলে বসবাসকারী ভারতীয় শ্রমিকদের পরিবারগুলো বেশি চিন্তিত দেখাচ্ছে।
ইসরায়েলে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় রয়েছেন। এর মধ্যে ৬,৬৯৪ জন শ্রমিক, যারা বিভিন্ন কো ম্পা নিতে কাজ করছেন।
এই শ্রমিকদের মধ্যে উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যের লোক রয়েছে।
ভারতে এই শ্রমিকদের পরিবারগুলো তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। শ্রমিকদের পরিবারগুলো উদ্বিগ্ন। তারা চায় সরকার তাদের কোনোভাবে ফিরিয়ে আনুক।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর মতে, ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রেভিয়ুন আজার বলেছেন, “আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। যখন ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কথা আসবে, তখন আমরা পুরোপুরি সহযোগিতা করব। যে কূটনীতিক এবং বিদেশী নাগরিকরা যেতে চান, তাদের পুরোপুরি সহায়তা দেওয়া হবে। তবে, কেবল সড়ক এবং সমুদ্রপথের বিকল্প উপলব্ধ রয়েছে।”
পরিবারের সদস্যরা কী বলছেন?
উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ জেলার আড়গোরওয়া গ্রাম। এই অঞ্চলের অনেক লোক ইসরায়েলে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন।
এই গ্রামেরই ৪২ বছর বয়সী অরবিন্দ কুমার গত এক বছর ধরে ইসরায়েলের তেল আভিভে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন।
তার বাবা স্কুলের শিক্ষক। তার স্ত্রী গ্রামে থাকেন এবং তাদের তিন সন্তান স্কুলে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতির পর তার পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন।
অরবিন্দের বাবা রামানন্দ বিবিসিকে বলেছেন, “২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। বুধবার সকাল ৯টায় তার সাথে কথা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন যে তারা বাঙ্কারে আছেন এবং মাঝে মাঝে কাজে যান।”
তিনি বলেন, “আমরা ভয় পেয়েছি। সেখানে আকাশপথ বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই তারা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসুক, কারণ তিনি জানিয়েছেন যে তার থেকে কিছুটা দূরে বোমা পড়েছে।”
অরবিন্দের স্ত্রী মমতা বলেছেন, “তিনি বলেছেন যে পরিস্থিতি ঠিক নেই। তিনি বোমা পড়তে দেখেছেন। যখন অ্যালার্ম বাজে, তখন তারা বাঙ্কারে চলে যায়। আমরা ভয় পেয়েছি এবং চাই তারা তাড়াতাড়ি ফিরে আসুক।”
শ্রাবণ কুমার মাডেসিয়া এখানকার প্রাক্তন ব্লক প্রধান। তিনি জানান, “ইসরায়েলে যাওয়ার জন্য প্রায় ২৫০ জন ফর্ম পূরণ করেছিল। কিন্তু ব্লকের ১০০ জনেরও বেশি লোক বর্তমানে ইসরায়েলে আছেন।”
তিনি জানান যে, এলাকার বেশিরভাগ লোক ইসরায়েলে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আভিভে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একটি ভবন।
বাহরাইচের গায়ত্রী দেবীর স্বামী অর্জুন কুমারও ইসরায়েলে আছেন।
বিবিসি-র সাথে কথা বলতে গিয়ে গায়ত্রী দেবী বলেছেন, “আমরা চাই তিনি ফিরে আসুন, কারণ কথা বলার সময় তিনি বলেছিলেন যে পরিস্থিতি ঠিক নেই। যদিও তিনি জানিয়েছেন যে তিনি সুরক্ষিত আছেন এবং কাজ করছেন।”
একইভাবে উত্তর প্রদেশের বারাবঙ্কি জেলার সালেহনগর গ্রামের অনেক লোক ইসরায়েলে আছেন। এদের বেশিরভাগই মজুরির কাজ করেন।
এখানে উমেশ সিংয়ের ভাই দীনেশ সিং ইসরায়েলে আছেন।
উমেশ বলেছেন, “আমার ভাই জানিয়েছেন যে এর আগে এখানকার পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল না। কিন্তু এখন বিপদ বেড়েছে। বাঙ্কারেও রাতভর জেগে থাকতে হচ্ছে।”
ইসরায়েলে ভারতীয়দের সামনে পরিস্থিতি
বাহরাইচের মনোজ কুমার নিসাদ তেল আভিভে কাজ করেন।
ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় শ্রমিকরা ইসরায়েলে গেছেন।
তেল আভিভের ভারতীয় দূতাবাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় ইসরায়েলে বাস করছিলেন। এদের মধ্যে শ্রমিক থেকে শুরু করে আইটি পেশাদার পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত। তবে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রায় ৮৫ হাজার ইহুদি সেখানকার নাগরিক, যারা ১৯৫০-৬০ এর দশকে ভারত থেকে ইসরায়েলে অভিবাসন করেছিলেন।
২০২৫ সালের ৫ এপ্রিল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং লোকসভায় জানিয়েছিলেন যে, ২০২৫ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত ৬৬৯৪ জন লোক ইসরায়েলে কাজ করছিল। এর মধ্যে ২৩৪৮ জন শ্রমিক ১৯৫টি কো ম্পা নিতে নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত।
তিনি জানিয়েছিলেন যে, ১৯৬৫ জন শ্রমিক লোহা বাঁকানো, ১৬০০ জন বিল্ডিং প্লাস্টার এবং ৭৯১ জন সিরামিক টাইলস লাগানোর কাজের সাথে জড়িত।
এদের মধ্যেই মনোজ কুমার নিসাদ, বাহরাইচ জেলার মিহিনপুরওয়া তহসিলের সররাকলা গ্রামের বাসিন্দা।
তিনি এক বছর ধরে তেল আভিভে রড বাঁকানোর কাজ করছেন। তার গ্রামের মোট পাঁচজন লোক তেল আভিভে আছেন।
তিনি বিবিসিকে ভিডিও কলে বলেছেন, “এখন আমরা এখানে সুরক্ষিত আছি। যদিও বেশ কয়েকবার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, কিন্তু আমাদের আশেপাশে কোনো বোমা পড়েনি। গত দুই-তিন দিন ধরে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “এখানে সব জায়গায় বাঙ্কার আছে। কিছু হলেই সবাই বাঙ্কারে চলে যায়। আপাতত যে কো ম্পা নিতে তারা কাজ করছেন, তারা এখনও কিছু বলেনি।”
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত ক্রমাগত বাড়ছে।
অন্যদিকে, সালেহনগরের বাসিন্দা দীনেশ সিংও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলে বাস করছেন।
দীনেশ সিং বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, তিনি বেয়ার শেবায় থাকেন এবং তার মতে এলাকার ‘বিপদ কিছুটা বেড়েছে’।
দীনেশের