“যদি আমেরিকা ঘাঁটি পায় তাহলে সম্পর্ক শেষ” – চীনের পাকিস্তানকে কঠোর সতর্কবাণী, দক্ষিণ এশিয়ায় তোলপাড়

ন্যাশনাল ডেস্ক: চীন সম্প্রতি পাকিস্তানকে একটি কঠোর বার্তা দিয়েছে, যেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, যদি ইসলামাবাদ আমেরিকাকে তার মাটিতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করার অনুমতি দেয়, তাহলে বেইজিং তার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে।
এই সতর্কবাণী এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমেরিকা এবং পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির খবর আলোচনায় রয়েছে। চীন এটিকে কেবল তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলেই মনে করেনি, বরং তার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত পরিকল্পনার উপর সরাসরি হামলাও বলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান এবং আমেরিকার সম্পর্কের কিছুটা শীতলতা দেখা গিয়েছিল, কিন্তু এখন খবর আসছে যে উভয় দেশের মধ্যে আবারও নিরাপত্তা এবং সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। চীন এই সম্ভাব্য জোটকে তার স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করে, বিশেষত যেহেতু তারা ইতিমধ্যে তার উচ্চাভিলাষী “চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর” (CPEC) প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। চীনের জন্য এই করিডোরটি কেবল বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের উপর বিপদ
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (Belt and Road Initiative – BRI) এর একটি বড় অংশ হলো সিপিইসি (CPEC), যা পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর (Gwadar Port) হয়ে গেছে। যদি পাকিস্তান আমেরিকান সামরিক ঘাঁটিগুলোকে অনুমতি দেয়, তাহলে চীনের আশঙ্কা যে আমেরিকা তার বিআরআই প্রকল্পগুলোর উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে। চীন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা কোনো অবস্থাতেই আমেরিকান সামরিক উপস্থিতি সহ্য করবে না।
পাকিস্তানের বিপদ বাড়ল
পাকিস্তান এখন একটি অত্যন্ত কঠিন কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়েছে। একদিকে সে চীনের সাথে তার দীর্ঘদিনের “আয়রন ব্রাদারহুড” সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, অন্যদিকে আমেরিকার সাথে তার পুরনো সম্পর্ককে আবারও শক্তিশালী করাও তার পররাষ্ট্রনীতির অংশ। কিন্তু উভয় পরাশক্তির মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে পাকিস্তানকে এমন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে যেখানে তাকে যেকোনো একটি পক্ষ বেছে নিতে হতে পারে।
আমেরিকা কি পাকিস্তানে আবার সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে?
এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই প্রশ্ন উঠছে যে, আমেরিকা কি সত্যিই পাকিস্তানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে? যদিও এখন পর্যন্ত পাকিস্তান বা আমেরিকার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ আসেনি, তবে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা তীব্র হয়েছে যে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার পর দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও তার সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে চায় এবং পাকিস্তান তার কৌশলের অংশ হতে পারে।
আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে
এই ঘটনাপ্রবাহ কেবল চীন ও পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সরাসরি প্রভাব ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর উপরও পড়বে। যদি পাকিস্তান আমেরিকার সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়ায়, তাহলে চীন কেবল পাকিস্তান থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে না, বরং এই অঞ্চলে ভারতের সাথে তার সহযোগিতা নতুন রূপে উপস্থাপন করতে পারে। একই সাথে, পাকিস্তানে আমেরিকার উপস্থিতি বৃদ্ধির ফলে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও প্রভাবিত হতে পারে।