যুদ্ধ ইরানের চোখ খুলে দিল, খামেনেইকে মরতে একা ফেলে গেল এই ৬ বন্ধু

যুদ্ধ ইরানের চোখ খুলে দিল, খামেনেইকে মরতে একা ফেলে গেল এই ৬ বন্ধু

ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে অবশেষে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। উভয় দেশ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং কূটনৈতিক চাপের মুখে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই পুরো সংঘাতের সময় ইরানকে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছ থেকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে।

যখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইয়ের (Ayatollah Ali Khamenei) জীবন সংকটাপন্ন ছিল, তখন যে দেশ ও সংগঠনগুলির উপর তিনি সবচেয়ে বেশি ভরসা করতেন, তারা হয় নীরবতা পালন করেছে অথবা পিঠ দেখিয়ে পালিয়েছে।

এই যুদ্ধে ইসরায়েলের সাথে লড়তে লড়তে ইরান হয়তো জয় বা পরাজয়ের চেয়ে বেশি কিছু শিখেছে: তার বিশ্বাস কাদের উপর ছিল এবং বাস্তবে কারা তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। চলুন জেনে নেওয়া যাক কে কী করেছে এবং কেন ইরানের এখন তার কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার।

১. হিজবুল্লাহ: আমেরিকা আসতেই নতজানু
ইরানের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী বলে বিবেচিত হিজবুল্লাহ (Hezbollah) এবার চমকপ্রদ আচরণ নিয়ে সামনে এসেছে। মার্কিন হামলার পর মনে করা হয়েছিল যে হিজবুল্লাহ ময়দানে নামবে, কিন্তু তার মুখপাত্র স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, “আমরা ইসরায়েল বা আমেরিকাকে আক্রমণ করব না, ইরান নিজেকে সামলাতে সক্ষম।” অর্থাৎ, আমেরিকার হস্তক্ষেপে আগে যে হিজবুল্লাহ লড়াইয়ের কথা বলছিল, তারা এখন যুদ্ধবিরতি এবং নিরপেক্ষতার কথা বলতে শুরু করেছে।

২. হামাস: শুধু বিবৃতিবাজি, কোনো পদক্ষেপ নেই
হামাস (Hamas) যদিও প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তারা ইরানকে সাহায্য করার জন্য কোনো ठोस পদক্ষেপ নেয়নি। ইরানের জন্য এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, শুধুমাত্র বক্তৃতা দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। হামাসের ইরানের সাথে খোলাখুলিভাবে না আসার একটি কারণ এটিও যে, ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল ইরানের প্রথম সারির পুরো ‘নিরাপত্তা প্রাচীর’কে একে একে ভেঙে দিয়েছে।

৩. সিরিয়া: বন্ধু হয়েও শত্রুকে পথ করে দিল
সিরিয়া (Syria), যা ইরানের ঐতিহ্যবাহী মিত্র বলে পরিচিত, এবারও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। ইসরায়েল ইরানি ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানোর জন্য সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সিরিয়ার নতুন সরকার এ বিষয়ে কোনো কঠোর প্রতিক্রিয়াও জানায়নি। নিজের আকাশেই শত্রুকে উড়তে দেওয়া যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

৪. পাকিস্তান: কাতার হামলার বিরোধিতা, ইরান থেকে দূরত্ব
যুদ্ধে পাকিস্তান ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানালেও, যখন ইরান আমেরিকার আল-উদিদ বিমানঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়, তখন পাকিস্তান ইরানের পক্ষে না দাঁড়িয়ে কাতারের সমর্থনে বিবৃতি দেয়। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ (Shahbaz Sharif) কাতারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন এবং ইরানের বিষয়ে নীরবতা পালন করেন। অর্থাৎ, পাকিস্তানও কৌশলগত ভারসাম্যের নামে ইরান থেকে সরে এসেছে।

৫. তুরস্ক: শান্তির কথায় আসল চালাকি
তুরস্ক (Turkey) সবসময় মধ্যস্থতাকারী হওয়ার চেষ্টা করে এসেছে, কিন্তু এবার সে চুপচাপ আমেরিকা এবং ইসরায়েলের পক্ষে নরম অবস্থান নিয়েছে। ইরানের পক্ষে কোনো বড় পদক্ষেপ নেয়নি, কিংবা বিরোধিতায় কোনো বড় বিবৃতিও দেয়নি। শান্তির নামে এই নিরপেক্ষতা আসলে কূটনৈতিক দূরত্বই ছিল।

৬. আফগানিস্তান: আশ্রয়প্রার্থীদের ফাঁস করে দিল
সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা এসেছে তালেবান-শাসিত আফগানিস্তান (Afghanistan) থেকে। যখন ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডস-এর কর্মকর্তারা আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন সেখানকার গোয়েন্দা সংস্থা জিডিআই (GDI) অভ্যন্তরীণ বৈঠকের সমস্ত তথ্য মিডিয়ায় ফাঁস করে দেয়। এর মধ্যে এও অন্তর্ভুক্ত ছিল যে, ইরানি কর্মকর্তাদের সাথে আল-কায়েদার (Al-Qaeda) জঙ্গিরাও সেখানে আসার চেষ্টা করতে পারে। এর অর্থ হলো, আশ্রয় দেওয়ার পরিবর্তে আফগানিস্তান ইরানের দুর্বলতাগুলোকে জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *