ইসলামী দেশগুলো ইরানের পাশে না দাঁড়ালেও, ইসরায়েলকে কাঁপিয়ে দিয়ে মুসলমানদের হিরো হলেন খামেনেই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার ভোরের দিকে ঘোষণা করেছেন যে, ইসরায়েল এবং ইরান উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কাতারের মার্কিন আল উদিদ বিমান ঘাঁটিতে ইরানের হামলার কয়েক ঘণ্টা পর এই ঘোষণা করা হয়।
যদিও ইরানের এই হামলা ছিল প্রতীকী, কিন্তু ইরান এর মাধ্যমে আমেরিকাকে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর হুমকিতে ভীত নয়।
ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর এটিই প্রথম যুদ্ধ ছিল, যেখানে ইসরায়েলি শহরগুলোতে এত বড় আকারের হামলা হয়েছে। ৮৬ বছর বয়সী সুপ্রিম লিডার আলি খামেনেই (Ali Khamenei) নিজের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ইরানের জনগণের সম্মান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি, তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনের জন্য ইরানের জনগণ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে যাবে, যার পর বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ইরানের সম্মান বেড়ে গেছে।
সৌদি এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করে, কিন্তু এই দুটি দেশই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরানের আমেরিকা এবং ইসরায়েলকে সরাসরি জবাব দেওয়ার পর এখন শিয়া মুসলমানদের পাশাপাশি সুন্নি মুসলমানদের মধ্যেও খামেনেইয়ের মর্যাদা বেড়ে গেছে।
ইসলামী দেশগুলোর সাহায্য ছাড়াই খামেনেই লড়েছেন
গত প্রায় ২১ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার শুধু সৌদি, কাতার-এর মতো উপসাগরীয় দেশগুলো নিন্দা করেছে। কিন্তু ইরান ফিলিস্তিনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিতে অটল থেকে শুরু থেকেই ইসরায়েলকে বিপদে ফেলেছে।
ইরান একটি শিয়া দেশ এবং ফিলিস্তিন একটি সুন্নি দেশ, কিন্তু গাজায় যখন হামলা হয়েছিল, ইরান সবার আগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। যুদ্ধের শুরু থেকেই ইরানের প্রক্সি (proxy) সংগঠন হুতি (Houthi), হিজবুল্লাহর (Hezbollah) মতো সংগঠনগুলো ইসরায়েলকে বিপদে ফেলেছে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, হামাসকেও ইরান সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেয়।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক মঞ্চে কূটনৈতিকভাবে ইরান ফিলিস্তিনের বিষয়টি উত্থাপন করেছে। গাজা যুদ্ধের ২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ইসরায়েল এবং আমেরিকার চোখে ইরান কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর ইসরায়েল ইরানে তার গুপ্তচর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইরানের প্রধান নেতা এবং কর্মকর্তাদের হত্যা শুরু করে। তবুও ইরান ফিলিস্তিনের পাশে থাকা থেকে সরে আসেনি।
সরাসরি যুদ্ধে এসেছে ইরান
এর আগে দুইবার ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে দূর থেকে সামান্য কিছু সংঘর্ষ দেখা গিয়েছিল, কিন্তু ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের উপর হামলা চালিয়ে তার অনেক সামরিক ও পারমাণবিক কেন্দ্রকে নিশানা করে, পাশাপাশি প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা, বিজ্ঞানীকেও হত্যা করে।
ইসরায়েলের এই হামলার পর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাত বেড়ে যায় এবং ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১০ দিন ধরে বিমান হামলা হয়, যেখানে ইরানের প্রায় ৬০০ মানুষের প্রাণ যায়, অন্যদিকে ইসরায়েলেও প্রায় ৩০ জন নিহত হন।
আমেরিকাকেও ভয় পাননি খামেনেই
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সতর্কতা দেওয়ার পর শনিবার ২১ জুন রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থান নাতাঞ্জ (Natanz), ফোর্দো (Fordow), এবং ইসফাহান (Isfahan)-এর উপর নিজের সবচেয়ে বিপজ্জনক বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে হামলা চালায়। পাশাপাশি ট্রাম্প এও হুমকি দেন যে, আমরা জানি খামেনেই কোথায় আছেন এবং ইরান আত্মসমর্পণ করুক।
খামেনেই নিজের জীবনের পরোয়া না করে তার উত্তরসূরি নির্ধারণ করে দেশবাসীর কাছে আবেদন করেন যে, আমার জীবন কিছু মূল্য রাখে না, আমার পরে আপনাদের ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জন্য ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি মার্কিন হামলার জবাব দেওয়ার সংকল্প নেন। মঙ্গলবার ভোরের দিকে ইরান তাই করেছে যা বলেছিল এবং কাতারে অবস্থিত মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে প্রায় ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় এবং জানায় যে, আমরা আমেরিকার লক্ষ্যবস্তুগুলোতেও আঘাত হানতে সক্ষম।
ইরান নতজানু আমেরিকা এবং ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির জন্য বাধ্য করেছে। এরপর খামেনেই সারা বিশ্বের মুসলমানদের হিরো হয়ে উঠেছেন।