ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় লাভ কীভাবে হলো? জানুন কার বেশি ক্ষতি হয়েছে

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি (Israel-Iran Ceasefire) ঘোষণা করা হয়েছে। ১২ দিনের তীব্র সামরিক সংঘাতের পর এখন তেহরান এবং তেল আভিভ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন এবং উভয় দেশকে এটি লঙ্ঘন না করার অনুরোধ করেছেন। তবে, উভয় দেশের রাগ শান্ত হয়েছে এমন কথা বলা এখনও তাড়াতাড়ি হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই যুদ্ধে কে জিতল?
ইসরায়েল ইরান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা। (ছবি সূত্র: জাগরণ গ্রাফিক্স)
প্রশ্ন উঠছে যে, ইরান কি এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জিদ ছেড়ে দেবে? আমেরিকা কি আলোচনার মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে লুকিয়ে আছে, কিন্তু আসুন জেনে নিই এই যুদ্ধ থেকে ইরান এবং ইসরায়েল কী অর্জন করেছে।
১৩ জুন সকালে ইসরায়েল একটাই উদ্দেশ্য নিয়ে ইরান আক্রমণ করেছিল যে, যাই হোক না কেন ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে আটকাতে হবে। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে, যেসব পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে ইসরায়েলের পক্ষে লক্ষ্যবস্তু করা কঠিন ছিল, সেখানে আমেরিকা বোমা বর্ষণ করে।
১৩ জুন সকালে ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করে। (ছবি সূত্র: রয়টার্স)
মোটকথা, ইরানের পারমাণবিক স্বপ্নকে উভয় দেশ মিলে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে যে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা আপাতত থমকে গেছে।
১২ দিন ধরে চলা এই যুদ্ধে ইসরায়েল আরও একবার মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক শক্তি দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। স্টিলথ এফ-৩৫ আই (Stealth F-35 I) বিমানগুলো ইরানে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং আয়রন ডোম (Iron Dome) তার জাদু দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সাথে প্রতিযোগিতা করা আপাতত কারো পক্ষে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।
ইসরায়েল এফ-৩৫ ফাইটার জেট দিয়ে ইরান আক্রমণ করে। (ছবি সূত্র: রয়টার্স)
এই সামরিক সংঘাতে একদিকে যেখানে ইরানের প্রায় ১০০০ জন মানুষ মারা গেছে, অন্যদিকে ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৩০ এর কাছাকাছি ছিল। অর্থাৎ, ইসরায়েল শুধু দেখায়নি যে তারা তাদের শত্রুদের মারার ক্ষমতা রাখে, বরং তারা তাদের দেশবাসীদের জীবনের প্রতিও সমান যত্নশীল।
এখন প্রশ্ন হলো, এই সংঘাতে ইরানের কী লাভ হলো।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই (Ayatollah Khamenei) এবং তার সরকারের জন্য এই সংঘাত যেন একটি জয়-জয় পরিস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। একদিকে যেখানে ইরানে “র্যালি অ্যারাউন্ড দ্য ফ্ল্যাগ” (Rally Around The Flag) এর প্রভাব দেখা গেছে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেইকে সমর্থন জানাতে রাস্তায় নেমেছিল জনতা। (ছবি সূত্র: রয়টার্স)
‘র্যালি অ্যারাউন্ড দ্য ফ্ল্যাগ’ কে আপনি এভাবে বুঝতে পারেন যে, যখন যুদ্ধের সময় কোনো দেশের জনগণ তাদের সরকার এবং নেতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায় এবং সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে, তখন তাকে র্যালি অ্যারাউন্ড দ্য ফ্ল্যাগ বলা হয়।
ইরানে এমনটাই হয়েছে, আবাসিক এলাকায় ব্যাপক বোমা হামলা হয়েছে। হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে, কিন্তু তারপরেও সেখানকার জনগণ আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই এবং ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) কে সমর্থন করেছে।
২৩ জুন রাতে ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক বিমানবন্দরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায়। ইরান দাবি করে যে, তারা মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে। এছাড়াও, ইরান এই হামলা করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, সময় এলে তারা বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশ অর্থাৎ আমেরিকার সাথেও যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আমেরিকার বিরোধিতা করছে জনগণ। (ছবি সূত্র: রয়টার্স)
এখন এ তো গেল ইরান এবং ইসরায়েলের কথা, কিন্তু বিশ্বে কোনো ঝামেলা হবে আর সেখানে আমেরিকা নিজের ফায়দা তুলবে না, এটা সম্ভব নয়।
ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে আমেরিকা বা বলা যেতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে নিজের ফায়দা তুলেছেন, তাও বুঝে নিন। ট্রাম্প আরও একবার দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করানোর কৃতিত্ব নিয়েছেন। অর্থাৎ, ট্রাম্পের কূটনীতির আরও একটি জয় হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফাইল ছবি।
বিশ্ব মানুক বা না মানুক, ট্রাম্প এখন এটাই বলবেন যে, তার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে আবারও শান্তি ফিরে এসেছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা বলবেন যে, এই কারণে ট্রাম্পকে একটি নোবেল শান্তি পুরস্কার তো দেওয়াই উচিত।