আমেরিকা পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে পাকিস্তান, মার্কিন রিপোর্টে দাবি

আমেরিকা পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে পাকিস্তান, মার্কিন রিপোর্টে দাবি

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তান গোপনে একটি পারমাণবিক-সজ্জিত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) তৈরি করছে, যা সরাসরি আমেরিকা পর্যন্ত হামলা করতে পারে।

এই রিপোর্টটি বিখ্যাত মার্কিন পত্রিকা ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ (Foreign Affairs)-এ প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে বলা হয়েছে যে, ভারতের ‘অপারেশন সিন্দূর’ (Operation Sindoor)-এর পর পাকিস্তান চীনের (China) সমর্থনে তার পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে উন্নত করার চেষ্টা করছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, যদি পাকিস্তান এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে, তাহলে আমেরিকা তাকে ‘পারমাণবিক শত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী যে কোনো দেশ যাকে আমেরিকার জন্য হুমকি বা বিরোধী বলে মনে করা হয়, তাকে পারমাণবিক বিরোধী ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে রাশিয়া (Russia), চীন এবং উত্তর কোরিয়াকে (North Korea) আমেরিকার বিরোধী বলে মনে করা হয়।

রিপোর্টে একজন মার্কিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, যদি পাকিস্তান এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে যা আমেরিকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, তাহলে ওয়াশিংটনের (Washington) কাছে তাকে পারমাণবিক শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না। এমন কোনো দেশ যারা আমেরিকা পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম ICBM রাখে, তারা আমেরিকার বন্ধু হতে পারে না।

পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, তার পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র ভারতকে প্রতিরোধের জন্য। এখন পর্যন্ত তারা শুধুমাত্র ছোট এবং মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উপর মনোযোগ দিয়েছে। পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে কোনো ICBM নেই। ২০২২ সালে তারা ‘শাহীন-III’ (Shaheen-III) নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল, যার পাল্লা ২৭০০ কিলোমিটার, যা ভারতের অনেক শহরকে তার আওতার মধ্যে নিয়ে এসেছিল।

ICBM কতটা বিপজ্জনক?
আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) পারমাণবিক এবং প্রচলিত উভয় ধরনের ওয়ারহেড (warhead) দিয়ে সজ্জিত হতে পারে। এটি ৫৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। পাকিস্তান দাবি করে যে, বর্তমানে তাদের কাছে কোনো ICBM নেই।

যদি পাকিস্তান ICBM তৈরি করে তবে এর উদ্দেশ্য আমেরিকাকে এই বার্তা দেওয়া হতে পারে যে, তারা যেন পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করার চেষ্টা না করে, এবং যদি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আবার উত্তেজনা বাড়ে, তাহলে আমেরিকা ভারতের পক্ষ নিয়ে হস্তক্ষেপও না করে।

আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল
আমেরিকা এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে। গত বছর আমেরিকা পাকিস্তানের দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স (NDC) এবং তার সাথে সম্পর্কিত আরও তিনটি সংস্থার উপর আরোপ করা হয়েছিল, যাদের আমেরিকার সম্পত্তি ফ্রিজ করা হয়েছিল এবং মার্কিন কো ম্পা নিগুলিকে তাদের সাথে ব্যবসা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। পাকিস্তান এই নিষেধাজ্ঞাগুলিকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছিল, কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (US State Department) একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম সংগ্রহের চেষ্টা করছিল।

NPT এর অংশ নয় পাকিস্তান
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং তারা পরমাণু অপ্রসারণ চুক্তি (NPT)-এর অংশ নয়। এই চুক্তি পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

অপারেশন সিন্দূর-এ ঘাবড়ে গিয়ে চীন-এর সাহায্য নিল পাকিস্তান
এই ঘটনাপ্রবাহ এমন সময়ে ঘটেছে, যখন আমেরিকার ওয়ার্ল্ড থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট (World Threat Assessment) রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তান ভারতের ‘অপারেশন সিন্দূর’-এ ঘাবড়ে গিয়ে চীন থেকে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রযুক্তি এবং উপাদান নিচ্ছে। ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর মাধ্যমে ভারত পাকিস্তান এবং পিওকে (POK)-তে ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি এবং ১১টি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করেছিল। খবর ছিল যে, পাকিস্তান ভারতের দিকে ‘ফাতেহ-II’ (Fatah-II) নামের একটি হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, যা ভারতের শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *