ভগবান জগন্নাথের ১৪৮তম রথযাত্রার জন্য ২৩৮৮৪ পুলিশকর্মী মোতায়েন, প্রথমবারের মতো এআই দিয়ে ভিড়ের ওপর নজর রাখা হবে

গুজরাটের আহমেদাবাদে (Ahmedabad) ভগবান জগন্নাথের (Lord Jagannath) ঐতিহাসিক ১৪৮তম রথযাত্রা (Rath Yatra) উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থার অভূতপূর্ব আয়োজন করা হয়েছে। এবার যাত্রা পথে ভিড় এবং আগুন সম্পর্কিত ঘটনা প্রতিরোধে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করা হবে। একই সাথে, যাত্রায় অংশগ্রহণকারী ১৭টি হাতির স্বাস্থ্যেরও বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আহমেদাবাদের জামালপুরে অবস্থিত ভগবান জগন্নাথ মন্দির থেকে প্রতি বছর আষাঢ়ী দ্বিতীয়া তিথিতে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের (Bhupendra Patel) সভাপতিত্বে গান্ধীনগরে (Gandhinagar) উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হর্ষ সাংভি (Harsh Sanghavi), মুখ্য সচিব পঙ্কজ যোশী (Pankaj Joshi), মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব এম.কে. দাস (M.K. Das), পুলিশ মহাপরিচালক বিকাশ সহায় (Vikas Sahay), আহমেদাবাদ পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক (G.S. Malik) এবং আহমেদাবাদ নগর নিগমের কমিশনার বঞ্চানিধি পানী (Banchhanidhi Pani) সহ বরিষ্ঠ সচিব এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে আহমেদাবাদ মহানগরে ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রার ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে আহমেদাবাদ শহর পুলিশ দ্বারা গৃহীত প্রস্তুতির বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়। এই বছর প্রথমবারের মতো শহর পুলিশ রথযাত্রায় ভিড় এবং ফায়ার অ্যালার্টের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করবে। AI-এর ব্যবহারের মাধ্যমে রথযাত্রা পথে কোনো জায়গায় যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লোক জড়ো হয়, তবে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ও নজরদারি
ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা উপলক্ষে পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক জানান যে, রথযাত্রায় আইজি (IG) স্তর থেকে শুরু করে পুলিশকর্মী, এসআরপি (SRP), চেতক কমান্ডো (Chetak Commando) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের (Rapid Action Force) ব্যাটালিয়ন সহ ২৩,৮৮৪ জনেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী ডিউটিতে থাকবেন। রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী রথ, ট্রাক, আখড়া এবং ভজন মণ্ডলী ও মহন্তদের সুরক্ষার জন্য প্রায় ৪,৫০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন। পুরো যাত্রা চলাকালীন ট্র্যাফিক শাখার যুগ্ম পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে প্রায় ১,০০০ কর্মী মোতায়েন করা হবে। ২৩টি ক্রেনেরও (crane) ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রথযাত্রা চলাকালীন পর্যাপ্ত নজরদারি ব্যবস্থার জন্য ২২৭টি ক্যামেরা, ৪১টি ড্রোন (drone), ২৮৭২টি বডি ওর্ন ক্যামেরা (body-worn camera) এর মাধ্যমে লাইভ (live) নজরদারি করা হবে। এছাড়া ২৪০টি ছাদে পয়েন্ট এবং ২৫টি ওয়াচ টাওয়ারও (watch tower) স্থাপন করা হয়েছে। এই সমস্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরো ১৬ কিলোমিটার রথযাত্রা পথে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কড়া নজরদারি থাকবে।
হাতিদের স্বাস্থ্যের বিশেষ যত্ন
ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রার জন্য মন্দিরেও প্রস্তুতি চলছে। রথযাত্রার নেতৃত্ব দেন গজরাজরা, যারা প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হন। এই বছর রথযাত্রায় ১৭টি গজরাজ অংশগ্রহণ করবেন। এদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন আহমেদাবাদের পশুপালন বিভাগ দ্বারা রাখা হচ্ছে।
আহমেদাবাদের পশুপালন উপ-পরিচালক সুকেতু উপাধ্যায়ের (Suketu Upadhyay) মতে, ২৩শে জুন থেকে গজরাজদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে। সবাইকে স্বাস্থ্য শংসাপত্রও (health certificate) জারি করা হবে। রথযাত্রা চলাকালীন পশুপালন এবং বন বিভাগের দল হাতিদের সাথে থাকবে, যাতে হাতিদের কোনো ধরনের সমস্যা না হয় এবং এটিও নিশ্চিত করা যায় যে তাদের রাগের কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। যদি হাতি তার মানসিক ভারসাম্য হারায় তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বন বিভাগের কর্মীরা ডার্ট গানও (dart gun) সাথে নিয়ে চলেন।