ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বর্ম ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল, ৩০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস! যুদ্ধে কি নেতানিয়াহু হেরে গেলেন?

ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শান্ত হয়েছে, ড্রোনগুলো ফিরে গেছে, কিন্তু ইসরায়েলের মাটিতে ধ্বংসযজ্ঞের যে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধের ভয়াবহ মূল্য চিৎকার করে বলছে। ১৩ই জুন শুরু হওয়া ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত এখন থেমে গেছে, তবে এর প্রভাবের স্তরগুলো এখন কাগজপত্রে উন্মোচিত হচ্ছে।
ইসরায়েলি মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধকালে প্রায় ৩৯,০০০ নাগরিক ক্ষতির পূরণের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি দাখিল করেছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগই বাড়ির ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি দেখায় যে, যুদ্ধ শুধু সীমান্তে লড়া হয়নি, বরং সাধারণ নাগরিকদের বাড়িঘর, দৈনন্দিন জীবন এবং স্বপ্নগুলোকেও মাড়িয়ে গেছে। ইসরায়েলি ট্যাক্স অথরিটির মতে, এখন পর্যন্ত বাড়ির ক্ষতির জন্য ৩০,৮০৯টি, গাড়ির ক্ষতির জন্য ৩,৭১৩টি এবং যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সামগ্রীর ক্ষতির জন্য ৪,০৮৫টি দাবি নথিভুক্ত হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে যে, এর থেকেও অনেক বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু অনেকেই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেননি। এমন পরিস্থিতিতে, এই সংখ্যা আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে।
সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে ইসরায়েলের হৃদয় তেল আবিবে
সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে ইসরায়েলের প্রাণকেন্দ্র তেল আবিবে। শুধুমাত্র এই শহরেই প্রায় ২৫,০০০ ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে। এর পরে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে ইসরায়েলের দক্ষিণের শহর আশকেলনে, যেখানে ১০,৭৯৩টি অভিযোগ এসেছে। উভয় শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ড্রোন দ্বারা সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ জনজীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। সরকার এখনও জানায়নি যে মোট অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কত বা ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া কীভাবে চলবে। কিন্তু যেভাবে ক্ষতির দাবি বাড়ছে, তাতে স্পষ্ট যে ইসরায়েলকে এই যুদ্ধের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মূল্য দীর্ঘকাল ধরে পরিশোধ করতে হবে।
এই যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ তখন জ্বলে ওঠে যখন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। ইসরায়েলের অভিযোগ ছিল যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, যা তেহরান অস্বীকার করে। জবাবে ইরান ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেয়। আমেরিকাও রণাঙ্গনে নেমে আসে এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। অবশেষে ১২ দিনের ধ্বংসযজ্ঞের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার সাথে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু এই যুদ্ধ শুধু কাগজে-কলমে লড়া হয়নি—এটি তাদের বুকের ভেতরে লড়া হয়েছে, যারা নিজেদের ঘর হারিয়েছে, প্রিয়জনদের হারিয়েছে, এবং এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে।