গ্রহাণু থেকে পাওয়া গেল এমন জিনিস, যা বদলে দেবে গোটা বিশ্ব, সৌরজগতের সম্পূর্ণ তত্ত্ব ওলটপালট হয়ে যাবে!

গ্রহাণু থেকে পাওয়া গেল এমন জিনিস, যা বদলে দেবে গোটা বিশ্ব, সৌরজগতের সম্পূর্ণ তত্ত্ব ওলটপালট হয়ে যাবে!

বিজ্ঞানীরা রায়ুগু (Ryugu) নামের গ্রহাণু বা অ্যাস্টেরয়েডের (Asteroid) একটি ক্ষুদ্র কণার মধ্যে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কার গ্রহাণু এবং এমনকি সৌরজগতের (Solar System) সৃষ্টি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিতে পারে।

আসলে, হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Hiroshima University) একটি গবেষণা দল জাপানের হায়াবুসা ২ মিশন (Hayabusa2 Mission) দ্বারা আনা নমুনাগুলির একটির ভিতরে জেরফিশারাইট (Jerfisherite) নামক একটি বিরল খনিজ পদার্থ খুঁজে পেয়েছে। রায়ুগু একটি খুব পুরানো কার্বন (Carbon) সমৃদ্ধ গ্রহাণু, যাকে সিআই চনড্রাইটস (CI Chondrites) নামক প্রাচীন উল্কাপিণ্ডের (Meteorites) মতো বলে মনে করা হয়।

কোন খনিজ পদার্থের খোঁজ মিলল?
এই ধরনের উল্কাপিণ্ডগুলিতে জলের সংস্পর্শে এসে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটেছিল এবং তারা খনিজে রূপান্তরিত হয়েছিল। এদের গঠন সৌরজগতের বাইরের শীতল অঞ্চলে হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে রায়ুগুর গঠন অনেকটা একই রকম। তারা জানিয়েছেন যে এর আকার তুলনামূলকভাবে হালকা পরিস্থিতির কারণে হয়েছে। এর তাপমাত্রা কখনও ৫০° সেলসিয়াস-এর উপরে বাড়েনি। এই কারণেই জেরফিশারাইটের আবিষ্কার এত চমকপ্রদ। এই খনিজ পদার্থ সাধারণত অনেক বেশি গরম এবং রাসায়নিকভাবে ভিন্ন পরিস্থিতিতে তৈরি হয়, যেমন অভ্যন্তরীণ সৌরজগতে তৈরি হওয়া উল্কাপিণ্ডগুলিতে পাওয়া এনস্টাটাইট চনড্রাইটস (Enstatite Chondrites)।

কীভাবে এই খোঁজ মিলল?
গবেষণার প্রধান লেখক সহযোগী অধ্যাপক মাসাকি মিয়াহারা (Masaki Miyahara) বলেছেন যে, ‘এটি আর্কটিক (Arctic) বরফে জমা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বীজ খুঁজে পাওয়ার মতো। এতে এই খনিজ পদার্থ হয়তো অন্য কোথাও থেকে এসেছে, অথবা রায়ুগুতে কখনও এমন পরিবেশ ছিল যা আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক আলাদা ছিল।’ গবেষণা দলটি যখন এটি খুঁজে পায়, তখন তারা জেরফিশারাইটের খোঁজ করছিলেন না। তারা একটি উন্নত মাইক্রোস্কোপ (Microscope) কৌশল ব্যবহার করে অধ্যয়ন করছিলেন যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে আসার ফলে রায়ুগু কণার পৃষ্ঠে কী পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু যখন তারা নমুনা প্লেটগুলির একটি থেকে গ্রেইন নম্বর ১৫ (Grain number 15) পরীক্ষা করেন, তখন তারা এই অপ্রত্যাশিত খনিজটি খুঁজে পান।

কেন বিজ্ঞানীরা অবাক?
এই আবিষ্কারের দুটি অর্থ হতে পারে: হয় জেরফিশারাইট কোনও অজানা উচ্চ তাপমাত্রার সময় রায়ুগুতে তৈরি হয়েছিল, অথবা এটি সৌরজগতের অন্য কোনও অংশ থেকে এসেছিল এবং কোনওভাবে রায়ুগুর গঠনের সময় এতে মিশে গিয়েছিল। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক প্রমাণগুলি অনুযায়ী, খনিজটি সরাসরি রায়ুগুতে তৈরি হয়ে থাকতে পারে, যা ইঙ্গিত দেয় যে এর অতীত বিজ্ঞানীদের কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি জটিল ছিল। মনে করা হয় যে রায়ুগুর মূল অংশ সৌরজগতের শুরু হওয়ার ১.৮ থেকে ২.৯ মিলিয়ন (Million) বছর পর, ঠান্ডা, বরফযুক্ত বাইরের অঞ্চলে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এতে জেরফিশারাইটের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, অন্তত কিছু স্থানে তো অনেক বেশি গরম পরিস্থিতি ছিল। যদি এমনটা না হয়, তবে বিভিন্ন পদার্থ এমনভাবে মিশেছিল, যা আমরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *