তুর্কিকে শিক্ষা দিতে তার শত্রুর সাথে দেখা করতে গেলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এ.পি. সিং! চিন্তায় এরদোয়ান

তুর্কিকে শিক্ষা দিতে তার শত্রুর সাথে দেখা করতে গেলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এ.পি. সিং! চিন্তায় এরদোয়ান

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাইপ্রাস সফরের পর এবার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং গ্রীস সফরে রয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গ্রীস এবং সাইপ্রাস উভয়ই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশ এবং উভয়েরই তুর্কি এর সাথে দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। অপারেশন সিন্দুরের সময় তুর্কি পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল।

গত কয়েক বছর ধরে গ্রীসের সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব বাড়ছে। ২০২৪ সালে গ্রীসের বিমানবাহিনী ভারতে এসেছিল, আর এখন সম্পর্ক আরও মজবুত করতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এ.পি. সিং সরকারি সফরে গ্রীসে রয়েছেন।

গ্রীসের বিমানবাহিনী দিল জমকালো সংবর্ধনা
গ্রীসের বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ (X) এ তথ্য দিয়ে জানিয়েছে যে, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো অভিযান এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করা। এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং গ্রীসের যুদ্ধ ইউনিট পরিদর্শন করেন এবং স্টাফ টকস-এ অংশ নেন। উভয় দেশের বিমানবাহিনী এর আগেও যৌথ সামরিক অনুশীলন যেমন ‘ইনিওস-২৩’, ‘ইনিওস-২৫’ এবং ‘তরঙ্গ শক্তি-২৪’ তে অংশগ্রহণ করেছে।

এয়ার চিফ মার্শাল সিং-এর গ্রীস সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এয়ার চিফ মার্শাল সিং, গ্রীসের যুদ্ধ ইউনিট ছাড়াও ডেকালিয়া এয়ারবেস (Dekelia Airbase) অবস্থিত হেলেনিক এয়ার ফোর্স একাডেমি পরিদর্শন করেন। এই সময় উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং যৌথ সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং-এর এই সফর প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব এবং ভারতের বৈশ্বিক সামরিক কূটনীতিকেও শক্তিশালী করবে। এর আগে গ্রীসের পাপাগু মিলিটারি বেস (Papagu Military Base) অবস্থিত হেলেনিক এয়ার ফোর্স জেনারেল স্টাফে (Hellenic Air Force General Staff) গ্রীসের বিমানবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডমোস্থেনিস গ্রেগোরিদিস এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিংকে আনুষ্ঠানিক স্বাগত জানান। এই সফর থেকে উভয় দেশের মধ্যে চলমান সামরিক সহযোগিতাকে নতুন দিশা দেওয়ার আশা করা হচ্ছে।

তুর্কির সাথে গ্রীসের সম্পর্ক কেমন?
তুর্কির সাথে গ্রীসের সম্পর্ক দা-কুমড়োর মতো। উভয় দেশের মধ্যে ভূমধ্যসাগর এবং এজিয়ান সাগরে গত কয়েক দশক ধরে বিবাদ চলছে। সাইপ্রাস নিয়েও উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। তুর্কির বিরুদ্ধে গ্রীসের বৈশ্বিক সমর্থন প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে ‘ওয়ার্ল্ড লিডার’ অর্থাৎ বিশ্বগুরু ভারত ছাড়া আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশ হতে পারে না। এই সেই তুর্কি, যা কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের পক্ষ নিতে কখনও ভোলে না। পাহালগাম হত্যাকাণ্ডের পর তুর্কির রাষ্ট্রপতি, পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাথে খুব হাসছিলেন, এবং ভারত-বিরোধী মনোভাব নিয়ে এরদোয়ান সেই সময় অস্ত্রও পাঠিয়েছিলেন। তবে অন্য কথা হলো, তুর্কির সমস্ত ড্রোন ভারতের সামনে ব্যর্থ হয়েছে। অপারেশন সিন্দুরের সময় তুর্কির ড্রোনকে ভারতীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আকাশে হারিয়ে দিয়েছিল। মনে করা হচ্ছে যে, বিমানবাহিনীর প্রধান তার গ্রিক সমকক্ষের সাথে আলোচনায় অপারেশন সিন্দুর নিয়েও আলোচনা করেছেন এবং কিভাবে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি ধ্বংস করেছে তা জানিয়েছেন।

গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী কাইরিয়াকোস মিৎসোটাকিসের ভারত সফর
ভূমধ্যসাগর এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ বাড়ছে, এমন সময়ে ভারত এবং গ্রীসের সামরিক সহযোগিতা উভয় দেশের কৌশলগত প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করবে। গত কয়েক বছরে এই কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য ভারত এবং গ্রীস একসাথে এসেছে। গত বছর গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী কাইরিয়াকোস মিৎসোটাকিসও ভারত সফর (২০-২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) করেছিলেন। তার সফর শুধুমাত্র প্রাচীন ভারত এবং গ্রীসের (আধুনিক গ্রীস) সম্পর্ককে পুনরায় সজীব করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এর অনেক কৌশলগত গুরুত্ব ছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *