ভারতের কূটনীতিকে খোলা চ্যালেঞ্জ: G7 সম্মেলনের সময় পান্নু-পাম্মার সাক্ষাৎ, কানাডা সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন

ভারতের কূটনীতিকে খোলা চ্যালেঞ্জ: G7 সম্মেলনের সময় পান্নু-পাম্মার সাক্ষাৎ, কানাডা সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন

কানাডায় যখন G7 দেশগুলোর উচ্চপর্যায়ের বৈঠক চলছিল, ঠিক সেই একই সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত খালিস্তানি সংগঠন শিখস ফর জাস্টিস (SFJ)-এর স্বঘোষিত অ্যাটর্নি জেনারেল গুরপতবন্ত সিং পান্নু (Gurpatwant Singh Pannu) এবং ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত ভাই পরমজিৎ সিং পাম্মার (Parmjeet Singh Pamma) ভ্যাঙ্কুভারে (Vancouver) প্রকাশ্য সাক্ষাৎ এক নতুন কূটনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এটি কেবল একটি সাধারণ সাক্ষাৎ ছিল না, বরং এটি এমন সময়ে ঘটেছে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)-কে G7 সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য কানাডা থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। একদিকে ভারত যখন বৈশ্বিক মঞ্চে নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তখন অন্যদিকে ভারতে ‘ওয়ান্টেড’ (Wanted) ঘোষিত এই ধরনের ব্যক্তিদের প্রকাশ্য উপস্থিতি কানাডার দ্বৈত নীতি এবং ভারতের কূটনৈতিক স্বার্থের উপর সম্ভাব্য আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

SFJ এবং খালিস্তান এজেন্ডা ভারতের জন্য খোলা চ্যালেঞ্জ
শিখস ফর জাস্টিস (SFJ)-কে ভারত সরকার ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন (Banned Terrorist Organization) ঘোষণা করেছিল। এই সংগঠন আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন (Britain)-এর মতো পশ্চিমা দেশগুলোতে খালিস্তান গণভোট (Referendum) অভিযান চালাচ্ছে। গুরপতবন্ত সিং পান্নু SFJ-এর প্রধান মুখ এবং প্রায়শই ভারত বিরোধী মন্তব্য, ভিডিও এবং ডিজিটাল প্রচারে সক্রিয় থাকেন। অন্যদিকে পরমজিৎ সিং পাম্মা, যিনি ব্রিটিশ নাগরিক নন, রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন। কানাডায় তার উপস্থিতি এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দ্বারা তাকে নিরাপত্তা প্রদান, সরাসরি ভারতের জন্য একটি সংবেদনশীল কূটনৈতিক বার্তা।

পাম্মার গ্রেপ্তার এবং মুক্তি
২০১৫ সালে পাম্মাকে পর্তুগালে (Portugal) ইন্টারপোলের (Interpol) রেড নোটিস (Red Notice) এর অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ভারত সরকার তার প্রত্যর্পণের (Extradition) দাবি জানায়, কিন্তু একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া এবং SFJ-এর সমর্থনের পর পর্তুগিজ আদালত ভারতের পেশ করা প্রমাণগুলোকে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট ও অপর্যাপ্ত মনে করে পাম্মাকে মুক্তি দেয়। এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে ব্রিটিশ সরকার পাম্মার প্রত্যর্পণের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিল, যার ফলে ভারতের কৌশল ব্যর্থ হয়। এই ঘটনাটি পশ্চিমা দেশগুলোর ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার উপর অবিশ্বাসকে তুলে ধরে।

কানাডায় খালিস্তানি এজেন্ডাকে ইন্ধন
কানাডায় হরদীপ সিং নিজ্জরের (Hardeep Singh Nijjar) হত্যার পর থেকেই ভারত-কানাডা সম্পর্ক এমনিতেই উত্তেজনাপূর্ণ। এখন পান্নু এবং পাম্মার প্রকাশ্য উপস্থিতি শিখ যুবক এবং ডায়াসপোরায় (Diaspora) নতুন শক্তি ও চিন্তার ঢেউ তুলেছে। G7 সম্মেলনের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে খালিস্তানি ব্যক্তিদের উপস্থিতি একদিকে শিখ সমর্থকদের জন্য উৎসাহজনক, অন্যদিকে ভারতের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভ্যাঙ্কুভারে পাম্মা এবং পান্নুর সাক্ষাৎ কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং ভারতের কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনৈতিক দ্বিমুখী চিন্তাভাবনাকে উন্মোচন করার মতো একটি পরিস্থিতি। G7 এর আড়ালে খালিস্তানি কার্যকলাপের উপস্থিতি ভারতের জন্য নতুন আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *