ইসরায়েলের পাশবিক হামলা! পরমাণু বিজ্ঞানীর বাড়িতে হামলায় পুরো পরিবার শেষ, ১১ জনের মৃত্যু

ইরান (Iran) এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্প্রতি শেষ হওয়া যুদ্ধের পর এবার একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা সামনে এসেছে। যুদ্ধবিরতির (Ceasefire) কয়েক দিনের মধ্যেই ইরানি মিডিয়া (Iranian Media) এবং আন্তর্জাতিক রিপোর্টে (International Report) জানানো হয়েছে যে, ইসরায়েলের হামলায় শুধু লক্ষ্যবস্তু বিজ্ঞানীই নন, তাদের পুরো পরিবারকেও নিশানা করা হয়েছিল।
বিশেষ করে একটি হামলায় একজন পরমাণু বিজ্ঞানীর (Nuclear Scientist) সাথে তার পুরো পরিবারের ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী, শিশু এবং বয়স্করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ (Operation Rising Lion) এর অধীনে পদক্ষেপ
১৩ জুন ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ এর অধীনে ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা, বিজ্ঞানী এবং সামরিক কর্মকর্তাদের নিশানা করেছিল। এই অপারেশনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি চলছিল এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ (Mossad) এই লক্ষ্যবস্তুগুলির প্রতিটি কার্যকলাপের উপর ক্রমাগত নজর রাখছিল। ইসরায়েলি দাবি অনুযায়ী, এই হামলায় শুধুমাত্র লক্ষ্যবস্তুকেই আঘাত করা হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর সামনে আসা রিপোর্টগুলি এই দাবিগুলির উপর প্রশ্ন তুলছে।
১০ জন বিজ্ঞানী নিশানায় ছিলেন, ১ জনের সাথে পুরো পরিবারও মারা গেছে
ইসরায়েল মোট ১০ জন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে নিশানা করেছিল। এদের মধ্যে একজন বিজ্ঞানীর পরিবারের সদস্যরা মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় জানিয়েছেন যে, হামলার সময় তাদের পুরো পরিবার বাড়িতেই উপস্থিত ছিল। এই হামলায় বিজ্ঞানী সহ পরিবারের সকল ১১ জন সদস্যেরও মৃত্যু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) শেয়ার করা ছবিগুলিতে নারী, শিশু এবং বয়স্কদের মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে। এই ঘটনা ইসরায়েলের ‘সঠিক হামলা’ দাবির মুখোশ খুলে দিয়েছে।
আস্তানেহ আশরাফিয়া (Astaneh Ashrafiyeh) পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে
এই মারাত্মক হামলা ইরানের উত্তরাংশে কাস্পিয়ান সাগরের (Caspian Sea) কাছে অবস্থিত আস্তানেহ আশরাফিয়া শহরে হয়েছিল। ইরানের ইংরেজি ভাষার সরকারি চ্যানেল প্রেস টিভি (Press TV) জানিয়েছে যে, নিহত বিজ্ঞানীর নাম ছিল সেদিঘী সাবার (Sedighi Sabar)। আল জাজিরার (Al Jazeera) রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, হামলার সময় পুরো পরিবার বাড়িতে ছিল এবং কেউ পালানোর সুযোগও পায়নি। হামলা এতটাই সুনির্দিষ্ট এবং ভয়াবহ ছিল যে, বাড়ির সকল সদস্য ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগে হামলা হয়েছিল
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ২৪ জুন হয়েছিল, কিন্তু এই হামলা ঠিক সেদিনই কয়েক ঘণ্টা আগে করা হয়েছিল। অর্থাৎ, শান্তি ঘোষণার ঠিক আগেই ইসরায়েল তাদের শেষ বড় আঘাতটি হেনেছিল। ইরানি মিডিয়া বলছে যে, এই হামলার সাথে সামরিক প্রয়োজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং এটি কেবল বিজ্ঞানীর উপর কেন্দ্রীভূত ছিল না, বরং এটি একটি “গণহত্যা”র (Massacre) মতো ছিল।
ইসরায়েলি রণনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠল
এই হামলার পর এখন ইসরায়েলি সামরিক নীতি (Military Policy) এবং ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ (Surgical Strike) এর দাবিগুলি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন উঠছে। সত্যিই কি এই হামলাগুলি কেবল সন্ত্রাসবাদ (Terrorism) এবং পারমাণবিক হুমকি (Nuclear Threat) প্রতিরোধের জন্য ছিল, নাকি এতে নিরীহ মানুষের জীবনকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে? ইরানের পক্ষ থেকে এই হামলাগুলিকে যুদ্ধাপরাধ (War Crime) বলা হয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলিও (International Human Rights Organizations) এই মামলার তদন্তের দাবি জানিয়েছে।