ইরানের ওপর হামলা: ট্রাম্প কি আইন ভেঙেছেন? আমেরিকায় বাড়ছে বিতর্ক!

ইরানের ওপর হামলা: ট্রাম্প কি আইন ভেঙেছেন? আমেরিকায় বাড়ছে বিতর্ক!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করে আসছে, এমনকি হাজার হাজার মাইল দূরে হলেও। ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী লবিগুলোও সাধারণত এর বিরোধিতা করে না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। খোদ কর্মকর্তারাও প্রশ্ন তুলছেন যে, কেন তাদের দেশ বারবার এমন করে? সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের ওপর বিমান হামলা চালানো হয়, যা এখন সমালোচনার মুখে।

এই ঘটনাকে ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে: বিশ্বের বৃহত্তম শক্তি হওয়াই কি আমেরিকাকে অন্যদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার দেয়? এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপ সম্পর্কে আমেরিকায় কি কোনো আইন আছে? এবং, কোনো নেতা কি তার হস্তক্ষেপের জন্য কোনো পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে পারেন? তেহরান ও তেল আবিবের বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ইরানকে চুপ করানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হলে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তার পদক্ষেপের কারণে মধ্যপ্রাচ্য একটি বড় যুদ্ধ থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে, তার এই “শান্তি রক্ষা” প্রচেষ্টা নিজ দেশেই সমালোচিত হচ্ছে। রিপাবলিকান সাংসদ থমাস ম্যাসি টুইটারে লিখেছেন যে এই হামলা সাংবিধানিক নয়। অন্য একজন নেতাও একই কথা বলেছেন।

মার্কিন আইন কী বলে?
মার্কিন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১ স্পষ্টভাবে বলে যে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা শুধুমাত্র কংগ্রেসের। অন্যদিকে, অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ, অর্থাৎ সেনাবাহিনী তার নির্দেশে চলে। হোয়াইট হাউসের সূত্র অনুযায়ী, ট্রাম্প ইরানের ওপর হামলার ভিত্তি হিসেবে তার এই ক্ষমতাকেই দেখিয়েছেন, কারণ তিনি মনে করেছেন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ জরুরি। সংবিধান দ্বিতীয় দেশের ওপর সামরিক পদক্ষেপের নিয়মাবলী সম্পর্কে খুব স্পষ্ট নয়, যার কারণে রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের মধ্যে প্রায়শই মতবিরোধ দেখা যায়। অনুচ্ছেদ ১ কংগ্রেসকে ক্ষমতা দেয় সেনাবাহিনীতে বাজেট পাশ করার এবং নিয়ম তৈরি করার, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের ক্ষেত্রে। আর অনুচ্ছেদ ২ রাষ্ট্রপতিকে মার্কিন সেনাবাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার হিসাবে বর্ণনা করে, অর্থাৎ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই সামরিক পদক্ষেপের নির্দেশ দিতে পারেন।

এই সাংবিধানিক অস্পষ্টতাই রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের মধ্যে সংঘাতের মূল কারণ। সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা নেই যে কখন রাষ্ট্রপতি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং কখন তাকে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে। তাই প্রতিটি নেতা নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেন। রাষ্ট্রপতির হাতে অসীম ক্ষমতা না আসে, সে জন্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর কংগ্রেস একটি আইন পাস করে – ওয়ার পাওয়ারস রেজোলিউশন। এই আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি যদি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই সেনা পাঠান, তাহলে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে জানাতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু হোয়াইট হাউস প্রায়শই এই নিয়ম উপেক্ষা করে। অতীতে, কোরিয়া যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, বা সিরিয়া, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের উপর হামলাসহ অনেকবার আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই অন্য দেশের উপর হামলা চালানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো বেশিরভাগই রাষ্ট্রপতিরা নিয়েছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব?
এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ উভয়ই। আসলে, রাষ্ট্রপতিরা এই ধরনের পদক্ষেপকে জাতীয় নিরাপত্তা বা জরুরি অবস্থার সাথে যুক্ত করেন। ফলে এটি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে যে সত্যিই এমন পরিস্থিতি ছিল কিনা। হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন রাষ্ট্রপতিরা সাধারণত কোনো আইনি মামলার অধীন হন না। তাদের এক্সিকিউটিভ প্রিভিলেজ দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে তারা তাদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তের জন্য সুরক্ষিত থাকেন। সুতরাং, সামগ্রিকভাবে, যদি রাষ্ট্রপতি ইরান বা অন্য কোনো দেশের উপর হামলা করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করা যায় না, শুধুমাত্র প্রশ্ন তোলা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *