শ্রাবন মাসে বাবা বৈদ্যনাথ ধাম কেন লক্ষ লক্ষ শিব ভক্তের প্রথম পছন্দ? জেনে নিন এর কারণ!

শ্রাবন মাসে বাবা বৈদ্যনাথ ধাম কেন লক্ষ লক্ষ শিব ভক্তের প্রথম পছন্দ? জেনে নিন এর কারণ!

প্রতি বছর সাওয়ান মাস এলেই ভগবান শিবের ভক্তদের মধ্যে এক অন্যরকম উৎসাহ ও শক্তি দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন শিবালয়ে যেখানে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে, সেখানে ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে অবস্থিত বাবা বৈদ্যনাথ ধাম এমন একটি তীর্থস্থান, যেখানে লক্ষ লক্ষ শিব ভক্তের সমাগম হয়। কাঁধে কাঁওয়ার (জল নিয়ে যাওয়ার বিশেষ পাত্র) নিয়ে শত শত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আসা ভক্তরা এখানে ‘বোল বম’ জয়ধ্বনি সহকারে বাবা ভোলেনাথের জলাভিষেক করেন। কিন্তু কেন সাওয়ান মাসে বৈদ্যনাথ ধাম শিব ভক্তদের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে? আসুন জেনে নিই এই পবিত্র স্থানের ধর্মীয়, পৌরাণিক এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব।

পৌরাণিক গুরুত্ব এবং ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি
বৈদ্যনাথ ধামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর পৌরাণিক গুরুত্ব। এটি ভগবান শিবের ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। এমন বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে লঙ্কার রাজা রাবণ ভগবান শিবকে প্রসন্ন করার জন্য তপস্যার পর তার আত্মলিঙ্গকে কৈলাস থেকে লঙ্কায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ভগবান শিব রাবণকে এই আত্মলিঙ্গ এই শর্তে দিয়েছিলেন যে, সে এটিকে পথে কোথাও মাটিতে রাখবে না। কিন্তু দেবতাদের অনুরোধে ভগবান বিষ্ণু নিজের মায়া দ্বারা রাবণকে লঘুশঙ্কা (মূত্রত্যাগ) করার জন্য বাধ্য করেন এবং রাবণ আত্মলিঙ্গটিকে এক রাখালের হাতে ধরতে দেন। সেই রাখাল আর কেউ নন, স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুই ছিলেন যিনি ভগবান শিবের রূপে আত্মলিঙ্গটিকে মাটিতে রেখে দেন, যা রাবণ আর তুলতে পারেননি। এই স্থানটিই আজ বৈদ্যনাথ ধাম নামে পরিচিত। এই কাহিনী ভক্তদের গভীর আস্থার কেন্দ্র এবং তাদের এখানে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করে।

অসীম শান্তি এবং অলৌকিক শক্তি
বৈদ্যনাথ ধামের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা মাত্রই ভক্তরা এক অসীম শান্তি এবং অলৌকিক শক্তি অনুভব করেন। মন্দিরের প্রাচীন স্থাপত্য, ঘণ্টার ধ্বনি, মন্ত্রোচ্চারণ এবং হাজার হাজার ভক্তের “বোল বম” জয়ধ্বনি পুরো পরিবেশকে ভক্তিপূর্ণ করে তোলে। এখানে এসে ভক্তরা তাদের সমস্ত দুশ্চিন্তা ভুলে কেবল ভগবান শিবের আরাধনায় মগ্ন হয়ে যান। সাওয়ান মাসে, যখন পুরো প্রাঙ্গণ সবুজ কাঁওয়ারিয়াদের দ্বারা ঢাকা থাকে, তখন এই দৃশ্যটি নিজেই মনমুগ্ধকর হয় এবং ভক্তদের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

মনোবাসনা পূরণের বিশ্বাস
বৈদ্যনাথ ধামকে “মনোকামনা লিঙ্গ”ও বলা হয়। এমন বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে এখানে শ্রদ্ধা সহকারে ভগবান শিবের পূজা-অর্চনা করলে সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ হয়। ভক্তরা তাদের বিভিন্ন ইচ্ছা নিয়ে এখানে আসেন। সেটি স্বাস্থ্য, ধন, পারিবারিক সুখ বা মোক্ষ লাভের কামনা হোক না কেন। এই অটুট বিশ্বাসই লক্ষ লক্ষ ভক্তকে প্রতি বছর বৈদ্যনাথ ধামের দিকে আকর্ষণ করে।

বৈদ্যনাথ ধাম কেবল একটি মন্দির নয়, বরং লক্ষ লক্ষ শিব ভক্তের আস্থা, বিশ্বাস এবং সমর্পণের প্রতীক। সাওয়ান মাসে এখানকার দৃশ্য, কাঁওয়ার যাত্রার ঐতিহ্য, পৌরাণিক গুরুত্ব এবং মনোবাসনা পূরণের বিশ্বাস এটিকে শিব ভক্তদের জন্য একটি অনিবার্য তীর্থস্থান করে তোলে। দেওঘরের বাবা বৈদ্যনাথ ধাম সত্যিই এমন একটি স্থান যেখানে এসে ভক্তরা কেবল ভগবান শিবের কাছাকাছি আসেন না, বরং এমন এক আধ্যাত্মিক যাত্রা অনুভব করেন যা তাদের জীবনকে সার্থক করে তোলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *