পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি আপনাকে সাহায্য করব? ট্রাম্প বললেন …

পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি আপনাকে সাহায্য করব? ট্রাম্প বললেন …

ওয়াশিংটন: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হঠাৎ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করলেন। পুতিন বললেন, “আমি কি ইরানের বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করব?” এই প্রস্তাবে ট্রাম্প পুতিনের ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং এর পরিবর্তে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে মনে করিয়ে দিলেন যে তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার জন্য তার সাহায্য চান।

ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তব্য
জানা গেছে, ন্যাটো সম্মেলনের সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প জানান যে, পুতিন ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমি কি ইরানের বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?” ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেন, “না, ইরানের ক্ষেত্রে আমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আপনাকে আমার অন্য ক্ষেত্রে সাহায্য দরকার” — ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য। ট্রাম্প সেই সময়ই পুতিনকে এই কথা জানিয়ে দেন।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি
ট্রাম্প দাবি করেছেন যে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলা ১২ দিনের সংঘাতে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। এই মধ্যস্থতায় তিনি পুরোপুরি সক্রিয় ছিলেন। তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই-এর সঙ্গে কথা বলে যুদ্ধবিরতির শর্তাবলীতে স্বাক্ষর করিয়েছেন। যদিও ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই উভয় পক্ষই নিয়ম লঙ্ঘন করে। এর উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের কঠোর সতর্কবার্তাও দেন। ট্রাম্প প্রথমবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েল অভিযোগ করে যে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু ইরান তা অস্বীকার করে। এরপর ইসরায়েল পাল্টা বিমান হামলার নির্দেশ দেয়। তবে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের আগেই ট্রাম্প উভয় দেশকে কঠোর সতর্কবার্তা দেন।

ইসরায়েল এখন আর ইরানের উপর হামলা করবে না
ট্রাম্প ঘোষণা করে বলেন, “ইসরায়েল এখন আর ইরানের উপর হামলা করবে না। তাদের সমস্ত বিমান বাড়িতে ফিরে যাবে… যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়ে গেছে!” ট্রাম্পের ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা পরেও উভয় পক্ষ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেনি, যা থেকে ট্রাম্পের কৌশল কিছু সময়ের জন্য সফল বলে মনে হচ্ছে। এখন আশা করা হচ্ছে যে এই যুদ্ধবিরতি আরও দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর থাকতে পারে। ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, তিনি এক সপ্তাহ পর উভয় দেশের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবার আলোচনা করবেন।

কেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল?
এই সংঘাতের শুরু হয়েছিল ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দিয়ে, যেখানে তেল আবিব ২০০টি যুদ্ধবিমান দিয়ে তেহরানের উপর ৩৩০টিরও বেশি বোমা ফেলেছিল। এতে ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটি, রকেট বেস এবং সামরিক ঘাঁটিগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। প্রায় দশ দিন পর আমেরিকা ইরানের উপর ছয়টি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ফেলে। এতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক সুবিধা ধ্বংস হয়ে যায়। তবে মার্কিন গোয়েন্দাদের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এর প্রভাব প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল। এর আগে ইসরায়েল দাবি করেছিল যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি প্রক্রিয়ায় রয়েছে, কিন্তু ইরান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল যে তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ নাগরিক উদ্দেশ্যে।

নতুন পারমাণবিক নিরাপত্তা চুক্তির দিকে
ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক নিরাপত্তা চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করেছিলেন, যাতে সবকিছু এনপিটি (NPT) নিয়ম অনুযায়ী থাকে। কিন্তু পরে আলোচনা খারাপ হতে শুরু করে। যখন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ শুরু হয়, তখন প্রথম দিকে আমেরিকা ইরানের উপর হামলা থেকে দূরে থাকে, কিন্তু যখন ইসরায়েল জানায় যে তারা পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত ইরানের তিনটি গোপন পারমাণবিক সুবিধা—ফোর্ডো (Fordow), ইসফাহান (Isfahan), নাতাঞ্জ (Natanz)—তে হামলা চালাতে সক্ষম নয় এবং কেবল মার্কিন ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা সেগুলি ধ্বংস করতে পারে, তখন ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। কিছু মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা যায় যে, এই হামলাগুলি সেই স্থানগুলির তুলনামূলকভাবে সামান্য ক্ষতি করেছে, তবুও এটি ট্রাম্প এবং তার দলের জন্য ইরানকে চাপে ফেলার একটি সুযোগ তৈরি করে। তবে বুধবার ইরান স্বীকার করে যে মার্কিন হামলায় তাদের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলির গুরুতর ক্ষতি হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *