ভারতকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা ব্যর্থ, ত্রয়ী থেকে দূরত্ব বজায় রাখল বাংলাদেশ; পাক-চীনও ধাক্কা খেলো

ভারতকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা ব্যর্থ, ত্রয়ী থেকে দূরত্ব বজায় রাখল বাংলাদেশ; পাক-চীনও ধাক্কা খেলো

চীনের কুনমিং-এ গত ১৯ জুন অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে নিয়ে যে সম্ভাব্য জোটের জল্পনা চলছিল, বাংলাদেশ এবার নিজেই তাতে ইতি টেনেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা এম. তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে বলেছেন যে এটি কোনো “রাজনৈতিক জোট” ছিল না, বরং একটি “অরাজনৈতিক আনুষ্ঠানিক বৈঠক” ছিল। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারতের উপর লক্ষ্যবস্তু করা বা ভারতকে বাদ দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

আসলে, চীন এবং পাকিস্তান বৈঠকের পর যে বিবৃতি জারি করেছিল, তাতে এটিকে “ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থার প্রথম বৈঠক” এবং “যৌথ কার্যনির্বাহী গোষ্ঠী” গঠনের কথা বলা হয়েছিল। এতে এই জল্পনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল যে, ভারত-বিরোধী কোনো নতুন কৌশলগত জোট তৈরি হচ্ছে কি না। কিন্তু বাংলাদেশ শুধু এই ধরনের কোনো পরিকল্পনা অস্বীকারই করেনি, বরং বলেছে যে বিবৃতিতে যে কার্যনির্বাহী গোষ্ঠীর উল্লেখ আছে, সে সম্পর্কে তাদের পক্ষ থেকে কোনো নিশ্চিতকরণ নেই।

তৌহিদ হোসেন মিডিয়ার সাথে আলাপকালে বলেছেন, “এই বৈঠকটি কেবল আনুষ্ঠানিক স্তরের ছিল, রাজনৈতিক নয়। এতে জোটের মতো কোনো উপাদান ছিল না। আমরা কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করছি, এমনটা একেবারেই নয়।” তিনি আরও বলেছেন যে, ভবিষ্যতে যদি ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-এর মতো দেশগুলির এই ধরনের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়, তাহলে বাংলাদেশ তাতেও অংশ নিতে প্রস্তুত থাকবে।

এজেন্ডা কী ছিল?
এই বৈঠকটি চীন-এর পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত দুটি আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের – চায়না-সাউথ এশিয়া এক্সপো এবং চায়না-সাউথ এশিয়া কো-অপারেশন ফোরাম – এর পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রাক্তন কার্যনির্বাহী পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী, যেখানে পাকিস্তান এবং চীনের সিনিয়র কর্মকর্তারা অংশ নেন। এই বৈঠকের পর চীন এবং পাকিস্তানের বিবৃতিতে “ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা” বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল, যার ফলে ভারতের পক্ষ থেকে এই ঘটনার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছিল।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কী বলা হলো?
বাংলাদেশ স্বীকার করেছে যে, বর্তমানে ভারতের সাথে সম্পর্কের “পুনর্ভারসাম্য” (rebalancing) চলছে, তবে সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। উপদেষ্টা হোসেন স্বীকার করেছেন যে পূর্ববর্তী সরকার (শেখ হাসিনা) এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বেশ গভীর ছিল, এবং বর্তমান সম্পর্ক তেমনটি নয়।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এপ্রিলে ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *