৭০০ গ্রেপ্তার, ৩ জনের ফাঁসি! যুদ্ধ থামলেও ইরানে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন আতঙ্ক

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ থামলেও, ইসরায়েলের শত্রুদের তালিকায় ইরান এখনও সবার উপরে। এখন হয়তো বারুদের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে, কিন্তু ইরানের উপর নজর রাখা এবং সময়মতো তাকে শিক্ষা দেওয়ার অভিযান থামবে না। ইসরায়েলের গোয়েন্দা মিশন ইরানে অব্যাহত থাকবে। মোসাদের প্রধান এই ঘোষণা দিয়ে ইরানকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছেন। মোসাদ প্রধানের মতে, এই অপারেশনের কারণে ইসরায়েল ইরানের চেয়ে প্রতিটি ফ্রন্টে দুই ধাপ এগিয়ে ছিল।
ইরান কল্পনাও করতে পারেনি যে তার দেশে মোসাদের এত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই তখন হতবাক হয়ে যান যখন হঠাৎ করে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়। হঠাৎ করে সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যা করা হয়। বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলি ধ্বংস করা হয়। ইরানের ভেতর থেকে ওড়ানো ড্রোন ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এই কারণেই ইরান দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধ শুরু করে, যার প্রথমটি ছিল বিস্ফোরক প্রতিশোধের, আর দ্বিতীয়টি ছিল গুপ্তচরদের নির্মূলের।
এজেন্টদের জন্য ইরান নিরাপদ স্থান – মোসাদ
ইরান দাবি করেছে যে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (CIA) এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ এখনও চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে, কারণ যুদ্ধবিরতির পরেও মোসাদ এবং ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ নিশ্চিত, কারণ এর ঘোষণা মোসাদ প্রধান নিজেই করেছেন। মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া তার দলের প্রশংসা করেছেন। ইরান অপারেশনে সাফল্যকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করেছেন। বহু বছর ধরে মোসাদের জন্য ইরান একটি নিরাপদ জায়গা।
মোসাদ প্রধানের এই কথা খামেনেই এবং ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মোসাদ প্রধান তার এজেন্টদের জন্য ইরানকে একটি নিরাপদ স্থান বলছেন, যার অর্থ ইরান মোসাদের নেটওয়ার্ক শেষ করার ক্ষমতা রাখে না। ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ভিএএজেএ (VAAJA)-এর অভিযান আসাম্পূর্ণ থাকবে। মোসাদ যখন খুশি ইরানের যেকোনো কোণায় অপারেশন চালাতে পারে।
মোসাদের নেটওয়ার্কের অনুসন্ধান চলছে
অন্যদিকে, ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ভিএএজেএ (VAAJA) পুরো শক্তি প্রয়োগ করেছে। ইরানে মোসাদের নেটওয়ার্ক খোঁজা হচ্ছে। দ্রুত গ্রেপ্তার চলছে। ইরানে এ পর্যন্ত ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩ জনকে ইরানে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরেও ইরানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইরান থেকে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, মোসাদের সঙ্গে জড়িতদের ধরার পর অনেক সূত্র মিলেছে, যার পর থেকে অভিযান চলছে এবং অনেককে ধরা হয়েছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে, ইরানের অভ্যন্তরে কমান্ডো অভিযানও চালানো হয়েছিল। ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে, এভাবেই ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করা হয়েছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। মোসাদ প্রধান আমেরিকান সংস্থা সিআইএ-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কারণ ইরানে অভিযান চালাতে সিআইএ মোসাদকে সাহায্য করেছিল। এছাড়াও, আইডিএফ (IDF)-এর নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও ইসরায়েলে অভিযান চালিয়েছে।
ইরান আনছে নতুন আইন
ইরানে মোসাদের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং মোসাদের সঙ্গে যুক্তদের মধ্যে ভয় বাড়ানোর জন্য ইরান এখন নতুন আইন আনতে চলেছে। এখন ইরানে গুপ্তচরবৃত্তি এবং দেশদ্রোহিতার জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ইসরায়েলে ভিএএজেএ (VAAJA)-এর নেটওয়ার্ক বাড়ানোরও চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, ইরানের প্রতিটি বিভাগে মোসাদের এজেন্ট রয়েছে। উচ্চ পদে মোসাদের গুপ্তচররা বসে আছে। ইরানের সেনাবাহিনীতেও মোসাদের অনুপ্রবেশ রয়েছে। মহিলা গুপ্তচরদের মাধ্যমে প্রতিটি অফিসারের উপর নজর রাখা হচ্ছে।
ভিএএজেএ (VAAJA)-এর চেষ্টা হলো মোসাদের এই নেটওয়ার্ককে দুর্বল করা। সম্প্রতি অনুসন্ধান অভিযানের সময় প্রকাশ পেয়েছে যে, চোরাচালানের মাধ্যমে ড্রোনের যন্ত্রাংশ ইরানে আনা হয়েছিল এবং ইরানের অভ্যন্তরে মোসাদের এজেন্টরা বেশ কয়েকটি গোপন কারখানা তৈরি করেছে যেখানে ড্রোন প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার নজর এখন এই ধরনের চোরাচালান রুটের উপরও। ইরানের সমস্ত ছোট-বড় কারখানার বিস্তারিত তথ্য বের করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের জনগণকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার অভিযান চালানো হচ্ছে।
ভিএএজেএ (VAAJA)-এর ইসরায়েলে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর উপর জোর
ইরানে যানবাহন বিক্রি এবং ভাড়া দেওয়ার বিষয়েও নিয়ম কঠোর করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে মোসাদ ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার থেকে দুই ধাপ এগিয়ে আছে, কিন্তু এখন ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ভিএএজেএ (VAAJA)ও ক্রমাগত তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে। ভিএএজেএ (VAAJA) ইসরায়েলে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে। ভিএএজেএ (VAAJA)ও মোসাদের পদ্ধতিতে সরকারি বিভাগগুলিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। ভিএএজেএ (VAAJA)-এর স্লিপার সেল সক্রিয় করার পর এখন তাদের মিশন দেওয়া হচ্ছে। ইরানের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তার সেনাবাহিনী এবং গোপন ঘাঁটিগুলির নিরাপত্তা। ইরান এতদিন শুধু তার শত্রুদের মোকাবিলা করার কৌশল তৈরি করছিল, কিন্তু এখন ইরান বুঝতে পেরেছে যে তাকে দেশের অভ্যন্তরে থাকা গুপ্তচরদের নেটওয়ার্কের সঙ্গেও মোকাবিলা করতে হবে।