পৃথিবীতে পাওয়া গেল নতুন রক্ত গ্রুপ ‘G নেগেটিভ’, অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য, মাত্র একজন মহিলার শরীরে এই রক্ত!

পৃথিবীতে এক ভিন্ন ধরনের রক্ত গোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া গেছে। মজার ব্যাপার হলো, এই রক্ত গোষ্ঠীর এখন পর্যন্ত বিশ্বে মাত্র একজন পরিচিত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। এই রক্ত গোষ্ঠীর রোগীর ক্ষেত্রে অন্য ৪৭টি রক্ত গোষ্ঠীর রক্তও মেলে না।
ফরাসি গবেষকরা মানুষের মধ্যে এই নতুন রক্ত গোষ্ঠীর সন্ধান পেয়েছেন।
বিশ্বের 48তম রক্ত গোষ্ঠী ‘G নেগেটিভ’
ফরাসি গবেষকরা (EFS) এটিকে অতি বিরল (Ultra Rare) রক্ত গোষ্ঠী হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যা গুয়াডেলোপিয়ান একজন মহিলার শরীরে পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, এটি বিশ্বের ৪৭তম রক্ত গোষ্ঠী। রক্ত সঞ্চালন এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনে রক্ত গোষ্ঠীর শনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু বিশেষ ধরনের রোগ নির্ণয়ে রক্ত গোষ্ঠী সহায়ক হয়।
রক্ত গোষ্ঠীর শনাক্তকরণের মাধ্যমে ডাক্তাররা রক্তদাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে ঝুঁকি আগে থেকেই অনুমান করতে পারেন। মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) অনুসারে, শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি বছর ১.৪ কোটি ইউনিট রক্ত সঞ্চালিত হয়। সাধারণ A, B এবং O গ্রুপ বাদ দিলে, বিশ্বে আরও অনেক বিরল রক্ত গোষ্ঠী রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশনও এই নতুন রক্ত গোষ্ঠীর উপর অনুমোদন দিয়েছে।
ফরাসি সংস্থা EFS জানিয়েছে, এই রক্ত গোষ্ঠীর নাম দেওয়া হয়েছে গুয়াডা নেগেটিভ (Gwada negative) বা G নেগেটিভ, এবং এখন পর্যন্ত এই একজন মহিলাকেই পাওয়া গেছে যার এই রক্ত গোষ্ঠী রয়েছে।
14 বছর দীর্ঘ গবেষণা
এই রক্ত গোষ্ঠী শনাক্তকরণের গবেষণা ২০১১ সালে শুরু হয়েছিল, যখন সেই মহিলার রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোনো রক্তদাতার রক্ত গোষ্ঠী তার সাথে মিলছিল না। গবেষকরা তখন স্বাভাবিক উপায়ে তার হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর চেষ্টা করেন এবং আট বছরের দীর্ঘ গবেষণা ও ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের পর ২০১৯ সালে তার নতুন রক্ত গোষ্ঠী হিসাবে এটিকে শনাক্ত করা হয়। তবে এটিকে ১৪ বছর পর সম্পূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
ফরাসি সংস্থা EFS-এর মেডিকেল বায়োলজিস্ট বলেছেন যে, ২০১১ সালে পরীক্ষা করার সময় সেই রোগীর রক্তে অত্যন্ত অস্বাভাবিক অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল। ৫৪ বছর বয়সী সেই মহিলার অস্ত্রোপচারের আগে মেডিকেল টেস্টের সময় এটি শনাক্ত করা হয়। কিন্তু রক্ত গোষ্ঠী না মেলায় তার অপারেশন বন্ধ করে দিতে হয়। চিকিৎসকরা দাবি করেছেন যে, মহিলা এই রক্ত গোষ্ঠী তার বাবা-মায়ের মিউটেটেড জিন (Mutated Gene) থেকে পেয়েছেন। বিশ্বে ABO গ্রুপের বিরল রক্ত গোষ্ঠী শনাক্তকরণের কাজ ১৯০০ সাল থেকে শুরু হয়েছিল।