হামাসকে সরিয়ে কি এবার গাজায় ইউএই-র প্রবেশ? পাশা কি উল্টাতে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যে?

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা শুরু করেছেন। গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায় ইসরায়েল একের পর এক বোমা ফেলেছে, যার মধ্যে একটি আবাসিক এলাকায় গিয়ে পড়েছে। এই ভয়াবহ হামলার পর মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটোছুটি করছে। ইসরায়েল উত্তর গাজার বিভিন্ন অঞ্চলেও বোমা হামলা চালিয়েছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় এসব হামলায় ৭৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এসবই করা হচ্ছে গাজাকে সমতল করার জন্য, যাতে সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ড্রিম গাজা’ গড়ে তোলা যায়।
কিছু মাস আগে ট্রাম্প এই ‘ড্রিম গাজা’-র একটি এআই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন। এই ভিডিওতে গাজাকে একটি জাঁকজমকপূর্ণ, ঝলমলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেখানে ধ্বংসস্তূপের জায়গায় ফাইভ স্টার হোটেল, রেইনবো ফাউন্টেন এবং সমুদ্রের ধারে পার্টি চলছে। ভিডিওতে ট্রাম্পের একটি বিশাল সোনার মূর্তি, ডলারের বৃষ্টিতে নাচছেন এলন মাস্ক এবং নেতানিয়াহুর সাথে ট্রাম্পকে সমুদ্রের ধারে জুসের গ্লাস ঠুকতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর শেষে ‘TRUMP GAZA’ লেখা রয়েছে, যেমন বিশ্বজুড়ে ট্রাম্প টাওয়ার দাঁড়িয়ে আছে। একইভাবে এখন গাজাকেও ট্রাম্পের ব্র্যান্ডিং-এর নামে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে।
ট্রাম্পের ‘ড্রিম গাজা’ পরিকল্পনা ও আব্রাহাম অ্যাকর্ডের সম্প্রসারণ
এই পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম সূত্রে খবর, ট্রাম্প, নেতানিয়াহু এবং রুবিও একসঙ্গে গাজায় যুদ্ধ শেষ করা এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডকে (Abraham Accord) নতুন রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। ২০২০ সালে আরব দেশ এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য এই আব্রাহাম অ্যাকর্ড শুরু হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক চুক্তির নামকরণ ‘আব্রাহাম’ করা হয়েছিল কারণ ইব্রাহিমকে মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদি – তিন ধর্মেই পয়গম্বর হিসেবে মানা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, একই পয়গম্বরে বিশ্বাসী এই তিন সম্প্রদায় যেন শান্তি ও কূটনীতির জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চে আসতে পারে। এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), বাহরাইন ও ইসরায়েল এতে স্বাক্ষর করে। পরে সুদান ও মরক্কোর মতো দেশগুলোও এই চুক্তি মেনে নেয়।
এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে শ্বাস নেওয়া গাজাকে ‘ড্রিম গাজা’-তে পরিণত করার জন্য এই আব্রাহাম অ্যাকর্ডের নতুন সংস্করণ আসছে। আব্রাহাম অ্যাকর্ডের সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনা চলছে, তাতে গাজা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আরও আরব দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। খবর অনুযায়ী, আব্রাহাম অ্যাকর্ডের সম্প্রসারণের আওতায় ইউএই এবং মিশর সহ চারটি আরব দেশকে গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার কথা চলছে। অর্থাৎ, হামাসকে সরিয়ে গাজার ক্ষমতা একটি আরব জোটকে দেওয়া হবে, তবে এর তদারকি থাকবে আমেরিকার হাতে। এই পরিকল্পনায় এমন প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যে ভবিষ্যতে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করতে বলা হবে।
মূল প্রশ্ন এখানেই ওঠে যে, ‘ড্রিম গাজা’-তে পৌঁছানোর পথের মূল্য কি মানুষের রক্তের বিনিময়ে আদায় করা হচ্ছে? গাজার বেশিরভাগ অংশই ইতিমধ্যেই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে এবং যা কিছু অবশিষ্ট আছে, তার উপরও নেতানিয়াহু ক্রমাগত বোমা ফেলছেন। অর্থাৎ, ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু যতই দাবি করুন না কেন, গাজায় তাদের স্বপ্নের প্রাসাদের ভিত্তি স্থাপিত হবে রক্ত, বাস্তুচ্যুতি এবং ধ্বংসস্তূপের উপরেই।