শিবপুরাণের ৬টি খণ্ড এবং ২৪,০০০ শ্লোকে ভগবান শিবের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই শিব মহাপুরাণেই ভগবান শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। শিব মহাপুরাণে বর্ণিত ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি উত্তরপ্রদেশে, একটি উত্তরাখণ্ডে, একটি ঝাড়খণ্ডে, একটি অন্ধ্রপ্রদেশে, একটি তামিলনাড়ুতে, দুটি মধ্যপ্রদেশে, তিনটি মহারাষ্ট্রে এবং দুটি গুজরাটে অবস্থিত। এগুলিকে যথাক্রমে সোমনাথ, মল্লিকার্জুন, মহাকালেশ্বর, ওঙ্কারেশ্বর, কেদারনাথ, ভীমাশঙ্কর, কাশী বিশ্বনাথ, ত্র্যম্বকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, নাগেশ্বর, রামেশ্বরম এবং ঘৃষ্ণেশ্বর নামে পূজা করা হয়।

শিব মহাপুরাণের কোটিরুদ্র সংহিতায় ভগবান শিবের এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের বিশদ বর্ণনা রয়েছে, যেখানে স্বয়ং ভগবান শিবের বাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বর্ণিত আছে যে, এই জ্যোতির্লিঙ্গগুলির দর্শন করলে পাপ নাশ হয়, মানসিক শান্তি ও মুক্তি লাভ হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, এই জ্যোতির্লিঙ্গগুলির মধ্যে কোনটি কোন রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তাদের দর্শন-পূজন করলে কী ধরনের ফল পাওয়া যায়, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

আপনার রাশি অনুযায়ী কোন জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করবেন?
মেষ রাশি: রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে মেষ রাশির সম্পর্ক রয়েছে। মনে করা হয়, রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করলে মেষ রাশির জাতকদের জীবনে সদ্ভাব ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

বৃষ রাশি: সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ বৃষ রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত। বৃষ রাশির জাতকদের ভগবান শিবের আশীর্বাদ পেতে এবং কল্যাণ অনুভব করতে সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

মিথুন রাশি: বুধ দ্বারা শাসিত মিথুন রাশির সম্পর্ক নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে। এখানে পূজা করলে মিথুন রাশির জাতকদের জীবনে ইতিবাচক শক্তি আসার সাথে সাথে তাদের আধ্যাত্মিক বিকাশ হয়।

কর্কট রাশি: ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সম্পর্ক কর্কট রাশির সঙ্গে। ‘ওম’ এখানে জ্যোতির্লিঙ্গের জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে প্রকাশ করে। কর্কট রাশির জাতকদের এই জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন ও পূজা করা উচিত।

সিংহ রাশি: সিংহ রাশির সম্পর্ক বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে। সিংহ রাশির জাতকরা এই জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করে স্বাস্থ্য, পরিবার এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। এখানে মহাদেব তার ভক্তদের সুস্বাস্থ্য, সন্তান এবং মন্ত্র সিদ্ধির আশীর্বাদ দেন।

কন্যা রাশি: কন্যা রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত জ্যোতির্লিঙ্গ হলো মল্লিকার্জুন। এই জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন মাত্রেই অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান ফল পাওয়া যায় এবং বিবাহ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে বলে বিশ্বাস করা হয়।

তুলা রাশি: তুলা রাশির সম্পর্ক মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে। এটিই একমাত্র দক্ষিণমুখী জ্যোতির্লিঙ্গ যেখানে দর্শন করলে তুলা রাশির জাতকদের জীবন থেকে সমস্ত ভয় এবং কালের ভয় দূর হয়।

বৃশ্চিক রাশি: শ্রী ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ বৃশ্চিক রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্বাস করা হয়, শ্রী ঘৃষ্ণেশ্বরের দর্শন করলে সন্তান সুখ, বিবাহ যোগ এবং পারিবারিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ধনু রাশি: কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের সম্পর্ক ধনু রাশির সঙ্গে। ধনু রাশির অধিপতি গ্রহ বৃহস্পতি জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং কেতু মোক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে। এই জ্যোতির্লিঙ্গ ব্যক্তিদের মোক্ষ লাভের পথে তাদের আধ্যাত্মিক যাত্রায় সাহায্য করে।

মকর রাশি: ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গের সম্পর্ক মকর রাশির সঙ্গে। মঙ্গল মকর রাশিতে উচ্চস্থ হয় এবং এই জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করলে যাদের জন্মকুণ্ডলীতে মঙ্গল দুর্বল অবস্থানে আছে, তারা স্বস্তি পেতে পারেন।

কুম্ভ রাশি: কুম্ভ রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত জ্যোতির্লিঙ্গ হলো কেদারনাথ। এখানে পূজা-দর্শন করলে কুম্ভ রাশির জাতক আধ্যাত্মিক বিকাশ এবং সমৃদ্ধির আশীর্বাদ পান।

মীন রাশি: মীন রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত জ্যোতির্লিঙ্গ ত্র্যম্বকেশ্বর। মীন রাশিতে উচ্চস্থ শুক্র বিলাসিতা, আরাম এবং পার্থিব সুখ দেয়। এই জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করলে জীবনের এই দিকগুলির সাথে সম্পর্কিত আশীর্বাদ পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। যাদের জন্মকুণ্ডলীর ষষ্ঠ ঘরে শুক্র রয়েছে, তাদের ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।