কলকাতা ধর্ষণ কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য! কলেজ ছাড়ার পরেও দাপট ছিল TMC ছাত্র নেতার, সামনে এল বড় রহস্য

কলকাতার একটি আইন কলেজের ধর্ষণ মামলায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে মনোজিত মিশ্রকে (Monojit Misra) চিহ্নিত করা হয়েছে, যিনি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ (TMCP)-এর দক্ষিণ কলকাতা জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক। জানা যাচ্ছে, স্নাতক পড়া শেষ করার পরেও ক্যাম্পাসে তার প্রভাব বজায় ছিল, যা এই ঘটনার পর নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, কলেজের ছাত্ররা মনোজিত মিশ্র সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন যে, মনোজিতের কলেজে শুধু প্রভাবই ছিল না, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও তার গভীর সম্পর্ক ছিল। ছাত্ররা আরও দাবি করেছেন যে, কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এবং বর্তমান বিধায়ক অশোক দেবই মনোজিত মিশ্রকে একজন অস্থায়ী কেরানি কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন।
কলেজ ক্যাম্পাসে মনোজিতের দাপট ও অতীত অভিযোগ
মনোজিত মিশ্রের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। একজন প্রাক্তন ছাত্র জানিয়েছেন, “কলেজে পড়ার সময় পুরনো ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এমনকি নতুন ক্যাম্পাসেও, প্রতিদ্বন্দ্বী টিএমসিপি গোষ্ঠীর এক ছাত্রকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।” আরও জানা গেছে, মনোজিতকে দুবার বহিষ্কার করা হয়েছিল, কিন্তু পাশ করার পরেও কলেজ তাকে অস্থায়ী কেরানি কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করে। একজন ছাত্রের মতে, “মনোজিত কলেজে ছাত্রদের একটি গ্যাং তৈরি করেছিল। সেটার নাম দিয়েছিল ‘টিম এমএম (মনোজিত মিশ্র)’। বাকি দুই অভিযুক্তও এই গ্যাংয়ের সদস্য।”
অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২৫ জুন বুধবার দুপুরে পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে কলেজে গিয়েছিলেন এক ছাত্রী। অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন যে, প্রধান অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র তার দুই সঙ্গী (১৯ বছর বয়সী জাইব আহমেদ এবং ২০ বছর বয়সী প্রমিত মুখার্জি) সহ তাকে ধর্ষণ করেছে। মেয়েটি আরও দাবি করেছে যে, মনোজিত তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। এর পর মনোজিত তার প্রেমিককে মেরে ফেলার এবং তার বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেয়। মেয়েটি অভিযোগ করে যে, অভিযুক্ত তাকে জোর করে কলেজ ক্যাম্পাসে আটকে রেখে ধর্ষণ করে।
তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া ও পুলিশের পদক্ষেপ
টিএমসিপি-র সভাপতি ত্রিনঙ্কুর ভট্টাচার্য দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন যে, মনোজিত একসময় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন আর নেই। তিনি আরও বলেন, “সে যেই হোক, দলের নেতা হোক বা না হোক, যদি সে দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আমরা এই ধরনের ঘটনার নিন্দা করি।”
অন্য একজন টিএমসিপি সদস্য বলেছেন, “কলেজে তার এতটাই দাপট ছিল যে ছাত্রদের তার নির্দেশ মানতে হতো। সরস্বতী পূজা থেকে শুরু করে সেমিনার ও দলীয় অনুষ্ঠান, কলেজের প্রতিটি বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ ছিল।”
মনোজিত কালীঘাট এলাকার বাসিন্দা। কালীঘাটের একজন TMC নেতা জানিয়েছেন, “আমরা জানি না কীভাবে দল তাকে আইন কলেজে জায়গা দিল। সে সবসময় স্থানীয় TMC কাউন্সিলর ও বিধায়কদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করত।”
মনোজিত নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে অনেক TMC নেতার সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করেছেন। পুলিশ তদন্তের পর গত ২৬ জুন, বৃহস্পতিবার তিন অভিযুক্তকেই গ্রেপ্তার করে এবং ২৭ জুন, বৃহস্পতিবার তাদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালেও, আদালত আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক এবং শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।