কল্পনা করুন এমন এক সিংহের, যা আজকের বনের রাজার চেয়েও বড়, শক্তিশালী এবং বেশি বিপজ্জনক ছিল। এমন এক শিকারী, যার গর্জনে বরফাবৃত ভূমি পর্যন্ত কেঁপে উঠত এবং মানুষ ভয়ে জবুথবু হয়ে যেত। আমরা কথা বলছি কেভ লায়ন (Cave Lion) নিয়ে। এই কেভ লায়ন ছিল এমন এক শিকারী, যা প্রায় ৫ লক্ষ বছর আগে আইস এজের (Ice Age) বরফাবৃত প্রান্তরে রাজত্ব করত। এই সিংহ আজকের আফ্রিকান সিংহের চেয়েও অনেক বেশি বিশাল এবং ভয়ংকর ছিল। আসুন জেনে নিই এই ‘আইস এজ কিং’-এর গল্প, যা একসময় ইউরোপ এবং এশিয়ার বরফাবৃত গুহাগুলিতে বিচরণ করত এবং এমনকি মানুষকেও চ্যালেঞ্জ করত।

কেভ লায়ন দেখতে বর্তমান সিংহের মতোই ছিল, তবে এর শরীর আরও বেশি শক্তিশালী এবং বিশাল ছিল। এর উচ্চতা প্রায় ১.২ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ২ মিটারেরও বেশি ছিল। এর শরীর ঘন লোমে ঢাকা থাকত যাতে এটি বরফঠান্ডায়ও বেঁচে থাকতে পারে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এর পুরুষদের অয়াল (mane) অর্থাৎ কেশর ছিল না, যেমনটি সাধারণত সিংহের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই তথ্য ফ্রান্সের প্রাচীন গুহাগুলিতে পাওয়া চিত্রকর্ম থেকে জানা গেছে।

কেভ লায়নের শিকার এবং বিলুপ্তি
কেভ লায়ন আইস এজের সবচেয়ে শক্তিশালী শিকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিল। এটি রেইনডিয়ার, বাইসন এবং এমনকি ছোট ম্যামথেরও শিকার করত। এটি একা বা দলবদ্ধভাবে শিকার করত এবং কখনও কখনও গুহা ভাল্লুক, হায়েনা এবং নেকড়েদের মতো অন্য বিপজ্জনক প্রাণীদের সাথেও সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। মানুষের সাথেও এর সংঘাত হতো—প্রাচীন গুহায় পাওয়া চিত্র এবং চামড়ার উপর পাওয়া চিহ্ন প্রমাণ করে যে মানুষও এর শিকার করত।

প্রায় ১৩,০০০ থেকে ১৪,০০০ বছর আগে কেভ লায়নের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যেমন: জলবায়ু পরিবর্তন, শিকারের সংখ্যা কমে যাওয়া, মানুষের দ্বারা অত্যধিক শিকার এবং অন্যান্য প্রাণীদের থেকে প্রতিযোগিতা। ডিএনএ গবেষণায় এও জানা গেছে যে, এর শেষ দিনগুলিতে তাদের জনসংখ্যা খুব দ্রুত কমে গিয়েছিল। কেভ লায়নের বিলুপ্তি সেই ‘ম্যামথ স্টেপ’ বাস্তুতন্ত্রের শেষেরও ইঙ্গিত ছিল।