মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে পারমাণবিক শক্তি এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে পুরনো বিবাদ নতুন করে তুঙ্গে উঠেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি ট্রাম্পকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্পষ্টতই ট্রাম্পের মন্তব্যকে অপমানজনক আখ্যা দিয়ে সর্বোচ্চ নেতা খামেনেইয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি ট্রাম্পকে প্রায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যদি আপনি সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনেইয়ের সাথে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে চান, তাহলে আপনাকে ভিন্ন সুর ধরতে হবে।” ইরানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যদি আমেরিকা এমনটা না করে, তবে খামেনেই ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে পারেন। ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে ‘মিথ্যাবাদী’ এবং ‘অকৃতজ্ঞ’ বলার পরই এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

খামেনেইকে ট্রাম্পের ভয়ঙ্কর আক্রমণ
ইসরায়েলের সমর্থনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি আলি খামেনেইকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। বেশ কয়েকটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার দাবি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে ‘মিথ্যাবাদী’ এবং ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছেন। একটি দীর্ঘ ‘এক্স’ পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, “আমি ইসরায়েলি বিমানের একটি বিশাল দলকে তেহরানের দিকে সরাসরি যেতে দেখেছিলাম এবং তাদের ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলাম। যদি আমেরিকার হস্তক্ষেপ না হতো, তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতো এবং ইসরায়েলি হামলায় অনেক ইরানি মারা যেত। আমি খামেনেইকে একটি অপমানজনক মৃত্যু থেকে বাঁচিয়েছি, আর এর পরিবর্তে তারা ইরানের জয়ের কথা এবং ওয়াশিংটনকে চড় মারার কথা বলছে। তারা মিথ্যাবাদী এবং অকৃতজ্ঞ।”

এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলি খামেনেইকে তিরস্কার করে বলেছেন, “যদি ইরান ইউরেনিয়াম অর্জনের চেষ্টা করে, তবে আমেরিকা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আবারও ইরানে বোমা হামলা চালাবে।” এটি ইঙ্গিত করে যে ইরান যতই বিজয়ের ঘোষণা করুক না কেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পিছু হটবেন না এবং ইসরায়েলের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিতে থাকবেন।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া জবাব
কোনো রাখঢাক না রেখেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কড়া জবাব দিয়েছেন। সৈয়দ আব্বাস আরাগচি একটি দীর্ঘ ‘এক্স’ পোস্ট শেয়ার করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, “ইরানিদের দৃঢ়তা আমাদের চমৎকার কার্পেটে সুপরিচিত, যা অগণিত ঘণ্টার কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে বোনা হয়েছে। কিন্তু একটি জাতি হিসাবে, আমাদের মূল ভিত্তি অত্যন্ত সরল এবং স্পষ্ট। আমরা নিজেদের মূল্য জানি এবং অন্য কাউকে আমাদের ভাগ্য নির্ধারণের অনুমতি দিই না।”

আরাগচি আরও লিখেছেন, “যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সত্যিই একটি চুক্তি চান, তবে তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইয়ের প্রতি অপমানজনক এবং অগ্রহণযোগ্য ভাষা পরিহার করতে হবে এবং তার অনুসারীদের আঘাত করা বন্ধ করতে হবে। ইরানি জনগণ, যারা বিশ্বকে দেখিয়েছে যে ইসরায়েলি শাসনের আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে বাঁচতে ‘ড্যাডি’-র কাছে পালানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। যদি বিভ্রান্তির কারণে আরও বড় ভুল হয়, তাহলে ইরান তার প্রকৃত ক্ষমতা প্রকাশ করতে দ্বিধা করবে না, যা নিঃসন্দেহে ইরানের ক্ষমতা সম্পর্কে যেকোনো বিভ্রান্তি দূর করবে।” ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কঠোর ভাষা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট যে তারা কোনো অবস্থাতেই নত হবে না।