কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কেন হয়? শেফালি জারিয়াওয়ালার মৃত্যু নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, জেনে নিন রোগের প্রাথমিক ও গুরুতর লক্ষণ

বিগ বসের প্রাক্তন প্রতিযোগী এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী শেফালি জারিয়াওয়ালার (Shefali Jariwala) স্বাস্থ্যের অবস্থা গত রাতে হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়, যার পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তাকে ‘ডেড অন অ্যারাইভাল’ (Dead On Arrival) ঘোষণা করেন। বর্তমানে তার মৃত্যুর কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (Cardiac Arrest) বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে এর নিশ্চিত খবর ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরেই জানা যাবে। রাত প্রায় ১২:৩০ টায় শেফালির দেহ আন্ধেরি-র কুপার হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এই ঘটনার পর অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, একজন সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপনকারী অভিনেত্রীর হঠাৎ এমন মৃত্যু কীভাবে হলো? কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আসলে কীভাবে ঘটে?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী এবং এর লক্ষণসমূহ
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট একটি গুরুতর অবস্থা যেখানে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। এই রোগকে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ও (Silent Heart Attack) বলা হয়। এটি এক ধরনের হৃদরোগ, যেখানে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মানুষের হৃৎপিণ্ডে রক্ত পাম্প হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। এর ফলে শরীরের বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত পৌঁছানো বন্ধ হয়ে যায়, যার কারণে কিছু মিনিটের মধ্যেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। করোনা মহামারীর পর থেকে বিশ্বব্যাপী এমন ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রাথমিক লক্ষণ:
বুকে হালকা ব্যথা অনুভব করা, শ্বাস নিতে কষ্ট, অলসতা অনুভব করা, ঘাবড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ (High BP) এবং ঠান্ডা ঘাম – এমন লক্ষণ দেখা যেতে পারে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে প্রথমে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং মানুষ হঠাৎ পড়ে যায়। ঠোঁটের নিচে চিবুকে ব্যথা, বাহু এবং বাম হাতে ব্যথার সাথে ঝিনঝিন করাও এর লক্ষণ হতে পারে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের গুরুতর লক্ষণ:
যখন হৃৎপিণ্ডের পেশী দুর্বল বা শক্ত হয়ে যায়, তখন রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা প্রভাবিত হয়, যার ফলে হৃৎপিণ্ডের ছন্দ ব্যাহত হতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনে অনিয়মিততা, বিশেষ করে ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন (Ventricular Fibrillation) হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হতে পারে।
কিছু লোক জন্মগতভাবে হৃদপিণ্ডের ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং স্থূলতা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, মানসিক চাপ এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাও হৃৎপিণ্ডকে দুর্বল করে তোলে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট প্রতিরোধের উপায়
নিজের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার দিকে মনোযোগ দিন। ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিন। স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খান, প্রতিদিন ব্যায়াম করুন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আপনার রক্তচাপ এবং সুগারের দিকে খেয়াল রাখুন, সময় সময় সেগুলি পরীক্ষা করতে থাকুন। বছরে দু-তিনবার পূর্ণাঙ্গ শারীরিক পরীক্ষা করান। সুুখাসন, বজ্রাসন, বৃক্ষাসন এবং যোগা মুদ্রা প্রতিদিন করলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সহ বেশ কয়েকটি হৃদরোগ থেকে বাঁচা যায়।