ভারতে ক্যানসার এখন একটি বড় স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালে যেখানে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩.৯ লক্ষ, সেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১৫.৬ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এই বৃদ্ধি প্রায় ১২% ধরা হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান শুধুমাত্র একটি সতর্কবার্তা নয়, বরং একটি গুরুতর সামাজিক ও স্বাস্থ্য সঙ্কটের ইঙ্গিত। বিশেষ করে, কিছু ধরনের ক্যানসার ভারতে দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং এর পেছনে জীবনযাপনের ধরন সম্পর্কিত কারণগুলিই প্রধান।

কোন ধরনের ক্যানসার দ্রুত ছড়াচ্ছে?

ICMR-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে স্তন ক্যানসার (Breast Cancer) এবং মুখগহ্বরের ক্যানসার (Oral Cancer) দ্রুত হারে বাড়ছে। এছাড়াও, যে ক্যানসারগুলির ঘটনা দ্রুত বাড়ছে সেগুলি হল:

ফুসফুসের ক্যানসার (Lung Cancer)

পাকস্থলীর ক্যানসার (Stomach Cancer)

জরায়ুমুখের ক্যানসার (Cervical Cancer)

কোলোরেক্টাল ক্যানসার (Colorectal Cancer)

ত্বকের ক্যানসার (Skin Cancer – মেলানোমা ও নন-মেলানোমা)

এই রোগগুলির মধ্যে অনেকগুলিরই যখন ধরা পড়ে, তখন তা ইতিমধ্যেই গুরুতর আকার ধারণ করে থাকে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল সময়মতো ক্যানসার পরীক্ষা না করানো।

মহিলাদের মধ্যে কেন বাড়ছে স্তন ক্যানসার?

চিকিৎসকদের মতে, মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঘটনা বাড়ার কারণগুলি হল:

দেরিতে বিবাহ

দেরিতে গর্ভধারণ

কম স্তন্যপান করানো

অতিরিক্ত স্থূলতা বৃদ্ধি

মানসিক চাপের জীবনযাপন

অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের অভাব

এই সমস্ত কারণে মহিলাদের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

পুরুষদের মধ্যে কেন বাড়ছে মুখগহ্বরের ক্যানসার?

পুরুষদের মধ্যে মুখগহ্বরের ক্যানসার মূলত তামাক, গুটখা, বিড়ি, সিগারেট, পান মশলা এবং অ্যালকোহলের মতো দ্রব্য অতিরিক্ত সেবনের কারণে হয়। এর পাশাপাশি, দাঁতের অপরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত মুখ পরীক্ষা না করানোও একটি বড় কারণ। গ্রামীণ এলাকা ও ছোট শহরগুলিতে সচেতনতার অভাবে এই ক্যানসার আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে।

চিকিৎসা কঠিন ও ব্যয়বহুল

ভারতে ক্যানসারের চিকিৎসা আজও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার সুবিধা সীমিত

AIIMS-এর মতো বড় হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়

বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার খরচ লাখ লাখ টাকা

গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সঠিক পরীক্ষার সুবিধাও নেই

এই কারণে অনেক রোগী সময়মতো চিকিৎসা করাতে পারেন না এবং তাদের অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়।

ক্যানসার বৃদ্ধির প্রধান কারণ

খারাপ জীবনযাপন: অনিয়মিত রুটিন, ঘুমের অভাব এবং মানসিক চাপ

ভুল খাদ্যাভ্যাস: জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া

দূষণ: বায়ু, জল এবং মাটির দূষণ শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে

তামাক ও অ্যালকোহল: এই দুটি ক্যানসারের অন্যতম বড় ঝুঁকির কারণ

ব্যায়ামের অভাব: শারীরিক কার্যকলাপের অভাবও রোগের জন্ম দেয়

জিনগত কারণ: কিছু ক্যানসার পারিবারিক ইতিহাসের কারণেও হয়

সচেতনতার অভাব: সময়মতো পরীক্ষা ও তথ্যের অভাব

প্রতিরোধের উপায় কী?

প্রতি বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো

তামাক, সিগারেট এবং অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা

সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা

৪০ বছর বয়সের পর মহিলাদের ম্যামোগ্রাম করানো উচিত

HPV ভ্যাকসিন দিয়ে জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব

মানসিক চাপ এড়ানো এবং নিয়মিত যোগা বা ধ্যান করা