ট্রাম্পের কানাডাকে বড় ধাক্কা: সমস্ত বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন, দুই দেশের উপর কী প্রভাব পড়বে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডাকে বড় ধাক্কা দিয়ে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে, কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কানাডাকে ব্যবসা করার জন্য একটি ‘কঠিন দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ হিসেবে কানাডার ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্সকে দায়ী করা হচ্ছে, যা আমেরিকার ব্যবসা শিল্পকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, কানাডা যখন আমেরিকার দুগ্ধজাত পণ্যের উপর ৪০০ শতাংশ শুল্ক আদায় করে এবং এখন আমেরিকার কো ম্পা নিগুলোর উপর ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স বসাচ্ছে, তখন আমেরিকা কীভাবে সেই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারে? কানাডাকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য পরিশোধিত শুল্কের বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। কানাডার এই ট্যাক্সের কারণেই আমেরিকা তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করছে।
কানাডার উপর কী প্রভাব পড়বে?
আমেরিকা কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তাহলে এর প্রভাব কী হবে তা জেনে নেওয়া যাক। কানাডার অর্থনীতি, সামাজিক ব্যবস্থা এবং বৈশ্বিক অবস্থানে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে, কারণ আমেরিকা কানাডার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে কানাডা প্রায় ৭৫% আমদানি (প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার) এবং ৫০% রপ্তানি আমেরিকার সঙ্গে করেছে। এখন যদি আমেরিকা কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে।
বিশেষ করে শক্তি (Energy), অটোমোবাইল এবং উৎপাদন (Manufacturing) খাত প্রভাবিত হবে। বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে, কারণ কানাডার অর্থনীতি আমেরিকার বাজারের উপর বেশি নির্ভরশীল। আমেরিকার বাণিজ্য বন্ধ করে দিলে এই খাতগুলোর শিল্পগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে কানাডার জিডিপি (GDP) ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। এই তিনটি শিল্পে কর্মরত লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। অন্টারিও এবং কুইবেকের মতো শিল্পাঞ্চলে বেকারত্ব বাড়বে।
আমেরিকা আর কানাডা থেকে তেল কিনবে না
আমেরিকার বাণিজ্য বন্ধ করার ফলে কানাডা যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স এবং ভোগ্যপণ্য পাবে না। এর ফলে উৎপাদন খরচ এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। বাণিজ্য চুক্তি শেষ হওয়ার কারণে আমেরিকা কানাডা থেকে প্রতিদিন ৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল কিনবে না। এই পরিমাণ তেল আমেরিকার মোট তেলের চাহিদার একটি বড় অংশ। আমেরিকা তেল না কিনলে তেল ও শক্তি কো ম্পা নিগুলো সংকটে পড়তে পারে। কানাডাকে বাণিজ্য করার জন্য চীন, ভারত বা ইউরোপের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হবে না।
আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য শেষ হওয়ার ফলে কানাডার অটোমোবাইল খাতের ফোর্ড (Ford), জিএম (GM) এবং স্টেলান্টিস (Stellantis)-এর মতো কো ম্পা নিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এবং তাদের কার্যালয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমেরিকা এখন কানাডা থেকে কাঠ, ইস্পাত এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ কিনবে না। কানাডার জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হবে না। কানাডিয়ান ডলার দুর্বল হবে, যার ফলে আমদানি ব্যয়বহুল হবে এবং দেশে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। আমেরিকা এখন কানাডায় বিনিয়োগ করবে না। এর ফলে কানাডার অবকাঠামো প্রকল্পগুলো প্রভাবিত হবে।
আমেরিকা, কানাডা এবং মেক্সিকোর মধ্যে সম্পাদিত USMCA (পূর্বের NAFTA) বাণিজ্য চুক্তি ভেঙে যাবে, যার ফলে আঞ্চলিক সহযোগিতা কমে আসবে। NORAD এবং NATO-এর মতো প্রতিরক্ষা জোটগুলো কৌশলগতভাবে প্রভাবিত হতে পারে, যার প্রভাব উত্তর আমেরিকার উপর পড়বে। কানাডার অন্টারিও, ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে অর্থনৈতিক সংকট এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। আমেরিকা থেকে কেনা জিনিসপত্রের অভাব দেখা দেবে, যার ফলে খরচ বাড়বে এবং মানুষকে মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হতে হবে।