১২ জ্যোতির্লিঙ্গের কার কোন রাশির সঙ্গে সম্পর্ক, জানুন আপনার রাশির শিবলিঙ্গ সম্পর্কে

নতুন দিল্লি: শিব পুরাণের ৬টি খণ্ড এবং ২৪,০০০ শ্লোকে ভগবান শিবের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই শিব মহাপুরাণেই ভগবান শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পর্কেও বর্ণনা পাওয়া যায়। শিব মহাপুরাণে বর্ণিত ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি উত্তর প্রদেশে, একটি উত্তরাখণ্ডে, একটি ঝাড়খণ্ডে, একটি অন্ধ্রপ্রদেশে, একটি তামিলনাড়ুতে, দুটি মধ্যপ্রদেশে, তিনটি মহারাষ্ট্রে এবং দুটি গুজরাটে অবস্থিত।
এগুলি ক্রমান্বয়ে সোমনাথ, মল্লিকার্জুন, মহাকালেশ্বর, ওঙ্কারেশ্বর, কেদারনাথ, ভীমাশঙ্কর, কাশী বিশ্বনাথ, ত্র্যম্বকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, নাগেশ্বর, রামেশ্বরম এবং ঘৃষ্ণেশ্বর নামে পরিচিত ও পূজিত হয়।
শিব মহাপুরাণের কোটিরুদ্র সংহিতায় ভগবান শিবের এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে সাক্ষাৎ ভগবান শিবের বাস বলে জানানো হয়েছে। এতে বর্ণিত আছে যে এই জ্যোতির্লিঙ্গগুলির দর্শন করলে পাপের নাশ হয়, মানসিক শান্তি ও মুক্তি লাভ হয়।
এক্ষেত্রে এও জানানো হয়েছে যে এর মধ্যে কোন জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে কোন রাশির সম্পর্ক আছে এবং এদের দর্শন-পূজা থেকে কী ধরনের ফল পাওয়া যায়। জ্যোতিষ অনুসারে রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে মেষ রাশির সম্পর্ক রয়েছে। মনে করা হয় যে রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করলে মেষ রাশির জাতকদের জীবনে সদ্ভাব ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ বৃষ রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত। বৃষ রাশির জাতকদের ভগবান শিবের আশীর্বাদ পেতে এবং কল্যাণ অনুভব করতে সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বুধ দ্বারা শাসিত মিথুন রাশির সম্পর্ক নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে। এখানে পূজা করলে মিথুন রাশির জাতকদের জীবনে ইতিবাচক শক্তি আসে এবং তাদের আধ্যাত্মিক বিকাশ হয়। ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সম্পর্ক কর্কট রাশির সঙ্গে। ‘ওঁ’ এখানে জ্যোতির্লিঙ্গের জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে প্রকাশ করে। তাই কর্কট রাশির জাতকদের এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন ও পূজা করা উচিত।
সিংহ রাশির সম্পর্ক বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে, সিংহ রাশির জাতকরা এই জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করে স্বাস্থ্য, পরিবার এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। এখানে মহাদেব তাঁর ভক্তদের ভালো স্বাস্থ্য, সন্তান এবং মন্ত্র সিদ্ধির আশীর্বাদ দেন। কন্যা রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত জ্যোতির্লিঙ্গ হল মল্লিকার্জুন। এই জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পর্কে বিশ্বাস করা হয় যে এর দর্শন মাত্রে অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান ফল পাওয়া যায় এবং বিবাহ সম্পর্কিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
তুলা রাশির সম্পর্ক মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সঙ্গে। এটি একমাত্র দক্ষিণমুখী জ্যোতির্লিঙ্গ, যেখানে দর্শন করলে তুলা রাশির জাতকদের জীবন থেকে সমস্ত ভয় ও কালের ভয় দূর হয়ে যায়। শ্রী ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ বৃশ্চিক রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্বাস করা হয় যে শ্রী ঘৃষ্ণেশ্বরের দর্শনে সন্তান সুখ, বিবাহের যোগ এবং পারিবারিক সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ হয়।
কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের সম্পর্ক ধনু রাশির সঙ্গে। ধনু রাশির অধিপতি গ্রহ বৃহস্পতি জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং কেতু মোক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে। এই জ্যোতির্লিঙ্গ ব্যক্তিকে মোক্ষ প্রাপ্তির দিকে তাদের আধ্যাত্মিক যাত্রায় সাহায্য করে।
ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গের সম্পর্ক মকর রাশির সঙ্গে। মঙ্গল মকর রাশিতে উচ্চস্থ হয় এবং এই জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করলে সেইসব ব্যক্তিরা স্বস্তি পেতে পারেন যাদের জন্মকুণ্ডলীতে মঙ্গল দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
কুম্ভ রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত জ্যোতির্লিঙ্গ কেদারনাথ। এখানে পূজা-দর্শন করলে কুম্ভ রাশির জাতক আধ্যাত্মিক বিকাশ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ পান। অন্যদিকে মীন রাশির সঙ্গে সম্পর্কিত জ্যোতির্লিঙ্গ ত্র্যম্বকেশ্বর। মীন রাশিতে উচ্চস্থ শুক্র বিলাসিতা, আরাম এবং পার্থিব সুখ দেয়। মনে করা হয় যে এই জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শনে জীবনের এই দিকগুলি সম্পর্কিত আশীর্বাদ পাওয়া যায়। যেসব জাতকের জন্মকুণ্ডলীর ষষ্ঠ ঘরে শুক্র রয়েছে, তাদের ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।