যার জন্য চেয়েছিলেন ন্যায়, তারই অভিযোগের কারণে ফেঁসে গেলেন জিতু পাটওয়ারি

জিতু পাটওয়ারির বিরুদ্ধে মামলা: মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি জিতু পাটওয়ারির বিরুদ্ধে অশোকনগর জেলার মুঙ্গাভলি থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই এফআইআরটি সেই যুবকই দায়ের করেছেন, যিনি দু’দিন আগে জিতু পাটওয়ারির সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
ওই যুবক গ্রামের সরপঞ্চের স্বামী ও ছেলের বিরুদ্ধে তাকে মল খাওয়ানোর অভিযোগ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই বিষয়ে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এরপরই জিতু পাটওয়ারি সেখান থেকেই কালেক্টরকে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেন।
জিতু পাটওয়ারির বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো আনা হয়েছে
এখন এই যুবক তার কথা থেকে সরে এসেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে জিতু পাটওয়ারির কথাতেই সরপঞ্চের স্বামী ও ছেলের বিরুদ্ধে ময়লা খাওয়ানো এবং মারধরের অভিযোগ এনেছিলেন। বিনিময়ে তাকে মোটরসাইকেল এবং আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
জিতু পাটওয়ারি কী বললেন
মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি জিতেন্দ্র (জিতু) পাটওয়ারি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর নিয়ে বলেছেন, “যেখানে দলিত ও কৃষক ভাইদের উপর অত্যাচার হয়, সেখানে বিরোধী দলের উচিত তাদের দায়িত্ব পালন করা। সরকারের উচিত বিষয়টি আমলে নেওয়া, তদন্ত করা এবং পদক্ষেপ নেওয়া, কিন্তু সরকার তার উল্টোটা করছে, যা তাদের শোভা পায় না।”
জিতু পাটওয়ারি আরও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার জন্য তাদের ধন্যবাদ, সাধুবাদ এবং অনেক শুভকামনা। আমি মনে করি তারা আমাকে মেডেল দিচ্ছে, কারণ আমি ভালো কাজ করছি। সরকারের উচিত সেইসব শোষিত, দুঃখী এবং অন্যায়ের শিকার মানুষদের ন্যায় দেওয়া। যদি তারা আমার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে এবং আমাকে জেলে পাঠিয়েও ন্যায় দিতে পারে, তাহলে আমি তাদের স্বাগত জানাই।”
‘জিতু পাটওয়ারির কথায় এই সব করা হয়েছে’
আসলে, বুধবার অশোকনগর জেলার মুঙ্গাভলি থানা এলাকার মুড়রা বারওয়াহ গ্রামের এক যুবক জিতু পাটওয়ারির সঙ্গে দেখা করেন। তাদের সাক্ষাতের ভিডিও জিতু পাটওয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন। যুবকটি পাটওয়ারির কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে তার ভাইয়ের মোটরসাইকেল সরপঞ্চের স্বামী ও ছেলে রেখে দিয়েছেন। যখন সে বাইক নিতে যায়, তখন বিকাশ যাদব ও তার বাবা রাজন যাদব তাকে মারধর করে এবং মল খাওয়ায়।
এরপর ২৬ জুন ওই যুবক কালেক্টরকে দেওয়া হলফনামায় স্বীকার করেন যে মানব মল খাওয়ানোর ঘটনাটি মিথ্যা ছিল। তিনি আরও বলেন, কংগ্রেস নেতারা তাকে ওরছাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে জিতু পাটওয়ারি তাকে অমানবিক ঘটনার বিষয়ে বিবৃতি দিতে বলেন। বিনিময়ে মোটরসাইকেল ও আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
বললেন- চাপে পড়ে মিথ্যা বয়ান দিয়েছি
কালেক্টরকে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, যুবকটি চাপে পড়ে মিথ্যা বয়ান দিয়েছিল। জিতু পাটওয়ারি এর ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেন। থানার ইনচার্জের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এই কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
এসপি বললেন- যুবক কালেক্টরের সঙ্গে দেখা করে হলফনামা দিয়েছে
পুলিশ সুপার বিনীত কুমার জৈন বলেন, “গতকাল সন্ধ্যায় যুবকটি কালেক্টরের সঙ্গে দেখা করে একটি ব্যক্তিগত হলফনামা দিয়েছিল। তাতে লেখা ছিল যে কংগ্রেসের কিছু নেতা ২৫ তারিখে তাকে ওরছাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের সঙ্গে জিতু পাটওয়ারির দেখা করিয়ে দেওয়া হয়। জিতু পাটওয়ারি তাকে এক পাশে নিয়ে গিয়ে বলেন যে, আপনি মল খাওয়ানোর কথা বলবেন। এর বিনিময়ে তাকে প্রলোভনও দেওয়া হয়েছিল। এরপরই গজরাজ লোধী জিতু পাটওয়ারির সামনে মল খাওয়ানোর কথা বলেন।”
পরে যুবকটি জানায় যে মল খাওয়ানোর কথাটি ভুল ছিল এবং জিতু পাটওয়ারির বোঝানোর ফলে সে এটি বলেছিল। এই মর্মে তিনি যে হলফনামা দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে শুক্রবার মুঙ্গাভলি থানায় জিতু পাটওয়ারি ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে বিএসের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
সত্যকে চাপা দিচ্ছে, ভুক্তভোগীদের ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি সরকার
জিতু পাটওয়ারির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হওয়ার পর কংগ্রেস এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই এফআইআর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের জীবন্ত উদাহরণ। কংগ্রেসের অভিযোগ, যুবকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনাকে বিজেপি সরকার চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভুক্তভোগীর উপর চাপ সৃষ্টি করে বয়ান বদলানো হয়েছে। কংগ্রেস এই মামলার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।