প্রেগনেন্সিতে প্রিলিমিনারি, ডেলিভারির ১৭ দিন পর মেন! মালবিকা ইউপিএসসি পাশ করে গড়লেন ইতিহাস

প্রেগনেন্সিতে প্রিলিমিনারি, ডেলিভারির ১৭ দিন পর মেন! মালবিকা ইউপিএসসি পাশ করে গড়লেন ইতিহাস

সাফল্যের গল্প: “কখনও কখনও জীবন আমাদের এমন এক মোড়ে এনে দাঁড় করায়, যেখানে আমাদের বেছে নিতে হয়—আমাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখব নাকি দায়িত্ব পালন করব। কিন্তু কিছু মানুষ এমনও থাকেন, যাঁরা দুটিকেই একসঙ্গে নিয়ে চলেন এবং উদাহরণ তৈরি করেন।” আইআরএস (IRS) আধিকারিক মালবিকা জি নায়ারও তেমনই এক উদাহরণ।

তিনি একজন মা হওয়ার দায়িত্ব এবং একজন অফিসার হওয়ার স্বপ্নকে একসঙ্গে বাঁচিয়েছেন। যেখানে বেশিরভাগ মানুষ ডেলিভারির পর বিশ্রাম এবং স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দেন, সেখানে মালবিকা ডেলিভারির মাত্র ১৭ দিন পর ইউপিএসসি (UPSC)-র মেস পরীক্ষা দেন এবং ৪৫তম র‍্যাঙ্ক অর্জন করেন।

তাঁর এই যাত্রা শুধুমাত্র সাফল্যের গল্প নয়, এটি জেদ, সাহস এবং পরিবারের সমর্থনের এমন এক উদাহরণ যা প্রতিটি যুবক—বিশেষ করে মহিলারা—জানতে এবং বুঝতে চাইবেন। এই গল্প বলে যে মা হওয়ার পরেও স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা যায় এবং সেগুলোকে বাস্তব রূপও দেওয়া যায়।

মা-ও হলেন, অফিসারও

কেরালার বাসিন্দা মালবিকা নায়ার আগে থেকেই একজন আইআরএস (IRS) আধিকারিক ছিলেন, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল আইএএস (IAS) হওয়া। ২০২৪ সালের ইউপিএসসি সিএসই (UPSC CSE) ছিল তাঁর ষষ্ঠ এবং শেষ প্রচেষ্টা। এর মাঝেই ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন এবং মাত্র ১৭ দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর ইউপিএসসি (UPSC)-র মেস পরীক্ষায় অংশ নেন। শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং মানসিক চাপ সত্ত্বেও তিনি হার মানেননি।

প্রেগনেন্সিতে প্রিলিমস, ডেলিভারির পর মেস

মালবিকা জানান, তিনি প্রিলিমস পরীক্ষা প্রেগনেন্সির সময় দিয়েছিলেন এবং মেস পরীক্ষাকে তিনি যুদ্ধের মতো অভিজ্ঞতা মনে করেন। একটি নবজাতক শিশুর সঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়া সহজ ছিল না। তিনি আরও বলেন যে ইন্টারভিউয়ের সময়ও তাঁর চার মাসের ছেলে আদিশেষকে দিল্লিতে আনা হয়েছিল, যাতে তিনি তাকে খাওয়াতে পারেন।

পরিবারই ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি

এই পুরো যাত্রায় মালবিকার স্বামী নন্দগোপন, যিনি নিজেও একজন আইপিএস (IPS) আধিকারিক, তাঁর সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা ছেলেকে পরীক্ষার কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে আসা, মালবিকাকে মানসিক সাহস জোগানো—প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর পাশে ছিলেন। মালবিকা বলেন, “যদি আমার পরিবার সঙ্গে না থাকত, তাহলে হয়তো আমি এতদূর পৌঁছাতে পারতাম না।”

এখন যখন তিনি তাঁর লক্ষ্য অর্জন করেছেন, তখন তাঁর গল্প হাজার হাজার যুবকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে—বিশেষ করে সেই সব মহিলাদের জন্য যাঁরা মা হওয়ার পর নিজেদের স্বপ্ন ছেড়ে দেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *