আমেরিকার ভয় নেই… রাশিয়া থেকে S-400, R-37M, Su-30MKI জেটের জন্য বড় চুক্তির প্রস্তুতি, ট্রাম্পের প্রতারণার কড়া জবাব দেবে ভারত!

মস্কো: চীনের কিংদাওতে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (SCO) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আন্দ্রে বেলোউসভের সাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক করেছেন।

রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বৈঠককে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজে যেভাবে স্পষ্ট এবং নির্ভীক ভাষায় ভারতের প্রতিরক্ষা প্রয়োজন এবং রাশিয়ার সাথে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ভারত এখন তার বিমান প্রতিরক্ষা এবং আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা দ্রুত উন্নত করার জন্য রাশিয়ার সাথে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা চুক্তির দিকে এগোচ্ছে। এই সপ্তাহে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ভারত রাশিয়া থেকে S-500 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার জন্য আলোচনাকে গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

রাজনাথ সিং এবং রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বৈঠকের পর যে আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বিশেষভাবে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, আধুনিক সক্ষমতা এবং বিমান প্ল্যাটফর্মের কথা বলা হয়েছে। এই প্রেস রিলিজটি বেশ আশ্চর্যজনক, কারণ সাধারণত এভাবে প্রকাশ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয় না। কিন্তু ভারত তা করেছে, তাই এটিকে আমেরিকার জন্য একটি বার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে, যারা ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় ভারতকে ‘প্রতারণা’ করেছে। প্রতিরক্ষা শিল্পের বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ভারত আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের দেশীয় উৎপাদন এবং সেগুলিকে Su-30MKI যুদ্ধবিমানে একত্রিত করার জন্য রাশিয়ার সহযোগিতা চাইছে।

আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের ভারতে স্থানীয় উৎপাদন

এয়ারো ইন্ডিয়া ২০২৫-এ রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে তাদের দীর্ঘ পাল্লার R-37M আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, যা RVV-BD নামে রপ্তানি করা হয়, তা বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল। রুশ প্রস্তাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির অধীনে ভারতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের প্রস্তাবও ছিল। এই বছরের মার্চ মাসে, রুশ সরকারি অস্ত্র কো ম্পা নি রোসোবোরোনেক্সপোর্ট (ROE) নিশ্চিত করেছিল যে রাশিয়া এবং ভারত আধুনিক গাইডেড বিমান ক্ষেপণাস্ত্রের যৌথ উন্নয়ন ও উৎপাদন নিয়ে আলোচনা করছে। এই অংশীদারিত্বের উদ্দেশ্য কেবল ভারতের সামরিক চাহিদা পূরণ করা নয়, বরং তৃতীয় বন্ধু দেশগুলিতেও তা রপ্তানি করা। অর্থাৎ, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে এই চুক্তি হলে ভারত ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র অধীনে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে তৃতীয় কোনো দেশের কাছে বিক্রি করতে পারবে, যেমনটা ভারত ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করে।

Su-30 MKI-এর বিধ্বংসী ক্ষমতা আরও বাড়বে

‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় ভারত Su-30 MKI যুদ্ধবিমান থেকেই পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। ভারতীয় বিমান বাহিনীর Su-30MKI ফাইটার বিমানের জন্য ব্লক-আপগ্রেড পরিকল্পনা আগেই চলছিল, কিন্তু ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর তাতে এখন গতি এসেছে। রাশিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা এই আপগ্রেডেশনে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির সাথে মিলে কাজ করবে। HAL-এর নেতৃত্বে এই আপগ্রেডেশন ভারতেই করা হবে। Su-30MKI-এর প্রস্তাবিত আপগ্রেডেশনে নতুন AESA রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম, ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক (IRST) এবং আধুনিক ককপিট ইন্টারফেস অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই আপগ্রেড বিমানটিকে ৫ম প্রজন্মের যুদ্ধের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত করবে। পাকিস্তান চীন থেকে J-35A যুদ্ধবিমান কিনতে চলেছে এবং মনে করা হচ্ছে যে ভারত পাকিস্তানের হুমকি মোকাবিলায় আরও আক্রমণাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং এরই অংশ হিসেবে Su-30 MKI-কে আপগ্রেড করা হবে।

ভিরূপাক্ষ রাডার… দেশীয় প্রযুক্তিতে ভারতের বাজি

ইউরেশিয়ান টাইমসে লেখা একটি নিবন্ধে ভারতের প্রাক্তন ফাইটার জেট পাইলট এবং বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিজয়েন্দ্র কে ঠাকুর লিখেছেন যে PIB-এর প্রেস রিলিজে কেবল ভারতের বিমান প্ল্যাটফর্মগুলিকে উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়নি, বরং স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে “S-400 সিস্টেমের সরবরাহ, SU-30MKI-এর আপগ্রেডেশন এবং খুব শীঘ্রই গুরুত্বপূর্ণ সামরিক হার্ডওয়্যার কেনা, এই বৈঠকের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।” তিনি লিখেছেন যে পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে চীনা PL-15 ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যা ভারতের জন্য একটি কৌশলগত ধাক্কা ছিল। এর পাল্লা এবং কিল-প্রোফাইল ভারতীয় বিমান বাহিনীকে দীর্ঘ পাল্লার বিধ্বংসী ক্ষমতার নতুন প্রয়োজন উপলব্ধি করিয়েছে। RVV-BD, যার পাল্লা ৩০০ কিলোমিটারের বেশি, তা এই হুমকির জবাব হতে পারে, তবে শর্ত হল Su-30MKI-এর সেন্সর এবং ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমকে আপগ্রেড করতে হবে। এটি ছাড়া এত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেবল নামেই থেকে যাবে।

এই কারণেই Su-30MKI যুদ্ধবিমানের আপগ্রেডেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে DRDO দ্বারা তৈরি Virupaksha AESA রাডার। এতে প্রায় ২৪০০ গ্যালিয়াম নাইট্রাইড-ভিত্তিক মডিউল থাকবে এবং এটি ১ বর্গ মিটারের একটি লক্ষ্যবস্তুকে ৬০০ কিলোমিটার দূর থেকে ট্র্যাক করতে পারবে। এই রাডার মাল্টি-টার্গেট ট্র্যাকিং এবং ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট মডিউল প্রতিরোধেও উন্নত। কিন্তু একটি চ্যালেঞ্জ হল, এই উন্নত রাডারটিকে Su-30MKI-এর মতো পুরনো প্ল্যাটফর্মে মূল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকের (OEM) প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়া একত্রিত করা জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এই কারণেই ভারতের রাশিয়ার সাহায্যের প্রয়োজন।

OEM প্রযুক্তি এবং রাশিয়ার ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা

বিশ্বের বেশিরভাগ ফাইটার জেট প্রস্তুতকারক কো ম্পা নি, যেমন ফরাসি ড্যাসল্ট, যারা রাফাল যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে, তারা তাদের সোর্স কোড শেয়ার করে না। ড্যাসল্ট ভারতকে রাফালের সোর্স কোড দিতে চায় না। এই কারণেই ভারত তাদের দেশীয় রাডার সিস্টেম বা ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র রাফাল যুদ্ধবিমানে স্থাপন করতে পারছে না। Su-30MKI-তে ভিরূপাক্ষ রাডার এবং RVV-BD ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে সংযুক্ত করার জন্য রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। রাশিয়ার সহায়তায় ভারতীয় বিমান বাহিনী এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে বিদ্যমান N011M Bars রাডারের সাথেও আংশিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। একই সাথে, নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেমের বিস্তার ঘটিয়ে Su-30MKI-কে S-400 এবং AEW&CS প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত করলে এর সক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে ভারত একটি শক্তিশালী কিল চেইন তৈরি করতে পারবে এবং শত্রুপক্ষের বিমানকে খুব সহজেই ভূপাতিত করা যাবে।

অর্থাৎ, Su-30MKI যুদ্ধবিমান আপগ্রেড করার পরিকল্পনা এবং এটিকে RVV-BD-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করার অর্থ ভারতীয় বিমান বাহিনীর শক্তিকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়া। যদি ভিরূপাক্ষ রাডার এবং RVV-BD ক্ষেপণাস্ত্রের ইন্টিগ্রেশন সম্ভব হয়, তবে এর মানে হবে ভারত তার প্রতিটি Su-30MKI যুদ্ধবিমানকে ৩০০ কিলোমিটারের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করতে পারবে। ভারতেই উৎপাদন হওয়ার কারণে লজিস্টিক সাপোর্ট অনেক সহজ হবে, প্রশিক্ষণ আরও ভালো হবে এবং পুরো বিমান বাহিনীতে সময়মতো ইন্টিগ্রেশন সম্ভব হবে। রাশিয়ার সাথে এই কৌশলগত সহযোগিতা ভারতকে কেবল একজন ক্রেতা নয়, বরং একজন অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, এবং এটাই ভারতের আত্মনির্ভরশীল প্রতিরক্ষা নীতির আসল উড়ান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *