কোনো যুদ্ধ নেই। কোনো কোলাহল নেই। শুধু শান্তি: যে পৃথিবীতে আগুন জ্বলছে, সেই পৃথিবীর এই ১০টি দেশ সংঘাতের চেয়ে শান্তিকেই বেছে নিয়েছে

কোনো যুদ্ধ নেই। কোনো কোলাহল নেই। শুধু শান্তি: যে পৃথিবীতে আগুন জ্বলছে, সেই পৃথিবীর এই ১০টি দেশ সংঘাতের চেয়ে শান্তিকেই বেছে নিয়েছে

নয়াদিল্লি: যুদ্ধ খবরের শিরোনামে থাকে। বিক্ষোভের জেরে কেঁপে ওঠে রাজধানীগুলো। শহরের পর শহরে বাজতে থাকে সাইরেন। কিন্তু সব জায়গায় এমনটা হয় না। বিশ্বের কিছু শান্ত কোণে, কিছু দেশ ভিন্ন পথে চলে।

তাদের রাস্তা শান্ত। তাদের রাজনীতি স্থির। তাদের মানুষ নিরাপদ।

২০২৫ সালের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স শুধু দেশগুলোকে স্থান দেয় না। এটি একটি আয়না তুলে ধরে। এটি দেখায় কোথায় শান্তি কাজ করে। কোথায় সরকার নাটক ছাড়াই কাজ করে। কোথায় নাগরিকরা ভয় ছাড়াই বসবাস করে।

এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে আইসল্যান্ড। কোনো সেনাবাহিনী নেই। কোনো শত্রু নেই। রাস্তায় কোনো রক্তপাত নেই। শুধু বিশ্বাস, নির্মল বাতাস আর নীরব সংকল্প। ২০০৮ সাল থেকে এটি বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ। এই ধারা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এটি মূল্যবোধ, পছন্দ এবং সমস্যা থেকে দূরে থাকার একটি জাতীয় ইচ্ছাশক্তির ফল।

এরপর আছে আয়ারল্যান্ড। একসময় সংঘাত-বিধ্বস্ত, এখন এটি কবি, কোডার এবং শান্তির জায়গা। অস্থিরতা থেকে আস্থার দিকে তার পরিবর্তন ছিল ধীর, বেদনাদায়ক, কিন্তু বাস্তব। অতীতের ক্ষত এখন শিক্ষা দেয়। অর্থনীতি সচল। রাস্তাগুলো নিরাপদ মনে হয়। নিরপেক্ষতা সাহায্য করে। বিশৃঙ্খলা একসময় কী কেড়ে নিয়েছিল, তা মনে রাখাও সাহায্য করে।

এরপর রয়েছে নিউজিল্যান্ড। অনেক দূরে অবস্থিত। সবুজ পাহাড়। নীল সমুদ্র। দৃঢ় আইন। দয়ালু হৃদয়। মানুষ এই ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে। ব্যবস্থাটি তাদের কথা শোনে। এমনকি ট্র্যাজেডিতেও, তারা একসাথে আরোগ্য লাভ করে। এই শান্তভাব তাদের বৈশ্বিক অবস্থানে প্রতিফলিত হয়।

অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ড যৌথভাবে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। স্থলবেষ্টিত। ধনী। নিরপেক্ষ। সুসংগঠিত। তাদের সীমানা অনেক দিন ধরে নড়াচড়া করেনি। মারামারি থেকে দূরে থাকার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিও নড়েনি। তাদের শক্তি নিহিত আছে স্থির থাকার মধ্যে।

সিঙ্গাপুর এশিয়ায় দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। নিয়ম কঠোর। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এর শান্তি উচ্চকণ্ঠ নয়। এটি নীরবতায় কাজ করে। শক্তিশালী নীতি। স্মার্ট ব্যবসা। কোনো বিভ্রান্তি নেই। এভাবেই এই নগর-রাষ্ট্রটি উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে টিকে আছে।

এরপর আছে পর্তুগাল। একসময় উপনিবেশবাদী ছিল। এখন একটি শান্ত ইউরোপীয় সফল দেশ। শান্ত রাজনীতি। স্বাগত জানানোর মতো মানুষ। এমনকি মাদক আইনও সহানুভূতির সঙ্গে নতুন করে লেখা হয়েছে। পরিবর্তন গভীর। এবং স্থায়ী।

তারপর আসে ডেনমার্ক। যেখানে কর বেশি এবং মেজাজ শান্ত। যেখানে মানুষ একে অপরকে বিশ্বাস করে। যেখানে ‘হিগি’ (hygge) মানে শুধু আরামের চেয়েও বেশি কিছু। এর মানে নাটকীয়তার চেয়ে আনন্দকে বেছে নেওয়া। এই অনুভূতি নীতিতেও প্রবাহিত হয়।

এরপর আছে স্লোভেনিয়া। একটি তরুণ দেশ। যুদ্ধ থেকে জন্ম নিয়েছে। এখন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি সেতু। আকারে ছোট। শান্তিতে বড়। এটি একটি শান্ত, সংঘাত-পরবর্তী অলৌকিক ঘটনা যা প্রমাণ করে আরোগ্য লাভ সম্ভব।

সবশেষে দশ নম্বরে রয়েছে ফিনল্যান্ড। ঠান্ডা বাতাস। উষ্ণ সমাজ। স্টিয়ারিং হুইলে স্থির হাত। রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত। কিন্তু কোনো আতঙ্ক নেই। শুধু প্রস্তুতি, শিক্ষা এবং সংকল্প। এটিকে তারা ‘সিসু’ (sisu) বলে। এক ধরনের নীরব আগুন যা নিভে যায় না।

এই তালিকার প্রতিটি দেশ ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ করেছে। ভিন্ন ভিন্ন পথ। কিন্তু একটি বিষয়ে তাদের মধ্যে মিল রয়েছে—কেউই বিশৃঙ্খলার পেছনে ছোটেনি।

তারা স্কুল, নিরাপত্তা এবং মানুষের মধ্যে বিনিয়োগ করেছে। নেতাদের কথা বলার সময় তাদের রাস্তা কাঁপে না। তাদের আইন শুধু সীমানাকেই রক্ষা করে না। আর তাদের শান্তি, নীরব হলেও, অনেক কথা বলে।

এগুলো এমন দেশ যেখানে শান্ত থাকা দুর্বলতা নয়। এটি ছদ্মবেশী শক্তি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *