২ টাকার মজুরি থেকে ২০০০ কোটি টাকার মালকিন হওয়ার সফর, কল্পনা সরোজের সাফল্যের গল্প

দেশে এবং বিশ্বে এমন অনেক মহিলা আছেন, যাঁরা তাঁদের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার জোরে সমাজের অনেক বাঁধা-ধরা নিয়ম ভেঙে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন এবং খ্যাতি অর্জন করেছেন। আজ আমরা আপনাদের জন্য এমন এক মহিলার অনুপ্রেরণামূলক সাফল্যের গল্প নিয়ে এসেছি, যিনি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ইচ্ছুক সকলের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।
এটি কল্পনা সরোজের গল্প, যিনি একসময় মাত্র ২ টাকার মজুরিতে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই যাত্রা আজ ২০০০ কোটি টাকার এক বিশাল সাম্রাজ্য পর্যন্ত পৌঁছেছে। ব্যবসা ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারেও ভূষিত করেছে।
কল্পনা সরোজের সাফল্যের গল্প
কল্পনা সরোজ মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলার রোপরখেড়া গ্রামের এক গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল এবং তিনি চাইতেন তাঁর মেয়ে পড়াশোনা করে স্বনির্ভর হোক। কিন্তু সামাজিক প্রথা তাঁদের পথে অনেক বাধা সৃষ্টি করে। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় শুরু হয়। শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু এই সময়েও তাঁর সাহস এবং আত্মবিশ্বাস তাঁকে থেমে থাকতে দেয়নি।
২ টাকার মজুরিতে শুরু হয়েছিল কাজ
দেশের অনেক গ্রামীণ এলাকায় মহিলাদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এমন জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মহিলাদের সামনে অনেক বাধা আসে। এর পরে বড় সাফল্য অর্জন করা অত্যন্ত সাহসের কাজ। কল্পনা সরোজও এমনটাই কিছু করেছিলেন। পরিবার এবং সমাজের বন্ধন ভেঙে কল্পনা মাত্র ১৬ বছর বয়সে মুম্বাই আসেন এবং একটি কাপড়ের মিলে ২ টাকার মজুরিতে কাজ শুরু করেন। এই ছোট শুরু তাঁর জীবনে নতুন দিক নিয়ে আসে। সেলাই এবং বুটিকের কাজে তিনি সম্ভাবনা দেখেন এবং ধীরে ধীরে কামানি টিউবস নামক নিজের ব্যবসার ভিত্তি স্থাপন করেন। অনেক সমস্যার মোকাবিলা করেও তিনি ধীরে ধীরে নিজের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে নিজের ব্যবসা বাড়ান এবং ভারতের সবচেয়ে সফল মহিলা উদ্যোগপতিদের মধ্যে নিজের নাম লেখান।
স্প্রিং টিউবের পুনরুত্থান
২০০০ সালে কামানি টিউবস লিমিটেড বিপুল ঋণ এবং শ্রমিক সমস্যার কারণে বন্ধ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছিল। এই সময়ে কল্পনা সরোজ নিজের সাহস বজায় রেখেছিলেন এবং নিজের ব্যবসা আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর কৌশল এবং নেতৃত্ব কো ম্পা নিকে নতুন জীবন দিয়েছিল। নিজের কো ম্পা নির বিশাল ঋণ মেটানোর জন্য তিনি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং অনেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। এরপর তাঁর ব্যবসা আবার সঠিক পথে ফিরে আসে।
আজ কামানি টিউবস ৫০০ কোটি টাকারও বেশি টার্নওভারের একটি কো ম্পা নি। কামানি স্টিলস, কেএস ক্রিয়েশনস এবং কল্পনা বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্সের মতো কল্পনা সরোজের অন্যান্য কো ম্পা নিগুলি আজ দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সাম্রাজ্যের অংশ।
কল্পনা সরোজের বড় সাফল্য
কল্পনা সরোজের কৃতিত্ব শুধু তাঁর ব্যক্তিগত লড়াইয়ের প্রতিফলন নয়, বরং মহিলা সশক্তিকরণেরও একটি উদাহরণ। ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাঁকে ব্যবসা এবং শিল্পে অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করে।
মহিলা সশক্তিকরণ: কল্পনা সরোজ নিজের কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং কৌশলের জোরে এই সাফল্য অর্জন করেছেন। সমাজের মহিলাদের অবস্থান সম্পর্কে তিনি সচেতন, তাই তিনি মহিলাদের জন্য শিক্ষা এবং রোজগারের সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি ফাউন্ডেশনও শুরু করেছেন।
কল্পনা সরোজের গল্প কোনো অনুপ্রেরণামূলক সিনেমার চেয়ে কম নয়। একটি ছোট গ্রাম থেকে শুরু হওয়া তাঁর যাত্রা আজ ২০০০ কোটি টাকার সাম্রাজ্য পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাঁর জীবন কেবল মহিলা সশক্তিকরণের প্রতীক নয়, বরং এটিও শেখায় যে দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কোনো লক্ষ্যই আসাম্ভব নয়।