ভারতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কামান, যা ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্ফোরক ছুড়তে পারে। এটি শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করা হয়েছিল, আর তাতেই তৈরি হয়েছিল একটি হ্রদ!

ভারতের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যে প্রাসাদ, দুর্গ এবং অস্ত্রের ঐতিহ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থানগুলোতে সাহস, শক্তি এবং স্থাপত্যের এক অসাধারণ মিশ্রণ লুকিয়ে আছে, যেখানে অনেক রহস্যও চাপা পড়ে আছে। এই ঐতিহ্যের একটি বিস্ময়কর অংশ হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় কামান, জয়বান তোফ (জয়বান কামান)।
এই কামানটি কেবল তার আকারের জন্য নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্যও পরিচিত। বিশেষ বিষয় হলো, এই কামানটি কেবল একবারই ব্যবহার করা হয়েছিল, এবং সেই সময় যা ঘটেছিল, তা আজও জয়পুরের লোককাহিনীতে শোনা যায়।
জয়বান কামান
এই বিশাল জয়বান কামানটি বর্তমানে জয়পুরের কাছে জয়গড় দুর্গে রাখা আছে। এই দুর্গটি আরাবলি পর্বতমালার ঈগলস হিলে অবস্থিত এবং এটি জয়পুরের শাসক দ্বিতীয় সাওয়াই জয় সিং ১৭২৬ সালে তৈরি করেছিলেন। সেই সময়, শত্রুদের গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য রাজারা উঁচু পাহাড়ে দুর্গ তৈরি করতেন। জয়গড় দুর্গও এমন একটি পাহাড়ে তৈরি এবং অত্যন্ত শক্তিশালী প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত।
জয়বান কামানটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ ফুট এবং ওজন প্রায় ৫০ টন। এর একটি গোলার ওজন ছিল ৩৫ কেজি এবং এর আঘাত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, গোলাটি প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়েছিল। সেই সময় জয়গড় থেকে গোলাটি ছোড়ার পর তা সরাসরি চাকসু নামের একটি গ্রামের কাছে পড়েছিল এবং সেখানে একটি বিশাল হ্রদ তৈরি হয়েছিল, যেখানে আজও জল আছে। ইতিহাসে এই ঘটনাটি ‘কামানের একটি আঘাতেই হ্রদ তৈরি হয়েছিল’ নামে বিখ্যাত।
কোথায় আছে এই জয়বান কামান?
এই কামানটি যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত হয়নি। এটি শুধুমাত্র একবার পরীক্ষার জন্য ছোড়া হয়েছিল। এই একবারেই এত বিকট শব্দ হয়েছিল যে, এর প্রভাব আশেপাশের মানুষের শ্রবণশক্তির ওপরও পড়েছিল। কামানটি ছোড়ার খরচও ছিল অনেক বেশি এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি, বারুদ এবং যন্ত্রপাতির খরচ কেবল রাজকীয় দরবারই বহন করতে পারত। তাই পরে এই কামানটি কেবল একটি প্রতীকী অস্ত্র হিসেবে দুর্গে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
জয়বান কামানটি জয়গড় দুর্গের ডুংগার দরওয়াজায় রাখা আছে। কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, জয়গড় এবং নাহারগড় দুর্গের সংযোগের কারণে এটি নাহারগড়ে ছিল বলেও মনে করা হয়। কিন্তু এর প্রধান স্থান জয়গড় দুর্গে রয়েছে। এই দুটি দুর্গ আজও আরাবলি পর্বতমালায় দাঁড়িয়ে আছে এবং জয়পুর শহরের ওপর নজর রাখা এই বিশাল কামানটি আজও সেই সময়ের শক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়।
ইতিহাসের পাতায় জয়বান কামান কেবল একটি অস্ত্র নয়, বরং সেই সময়ের বৈজ্ঞানিক দক্ষতা এবং রাজকীয় ক্ষমতার প্রতীক হয়ে আছে। এটি দেখার জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক জয়গড় দুর্গে ভিড় করেন।