ভয়ঙ্কর দারিদ্র্যের গ্রাসে কোটি কোটি দেশবাসী, কীভাবে কাটবে এই কঠিন দিন

বিশ্বব্যাংকের এপ্রিল ২০২৫-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও ৫.৭৫ শতাংশ ভারতীয় অতি দরিদ্র। ২০১১-১২ সালে এই অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ। ভারত সরকার এই রিপোর্টের উল্লেখ করে জানিয়েছে, বিপুল সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
নতুন অনুমান অনুযায়ী, ১৯৭৭-৭৮ সালে ভারতে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৭ শতাংশ। দারিদ্র্যের নতুন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার অনুযায়ী প্রতিদিন ৩ ডলার বা তার কম আয় করা ব্যক্তি দরিদ্র। ২০১১-১২ সালে ৩৩.৩৪ কোটি ভারতীয় দরিদ্র ছিলেন।
৩ ডলারের দারিদ্র্যসীমা প্রায় ২৫৫ টাকার সমান, কিন্তু এটি পুরোপুরি সঠিক নয় কারণ দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণ করা হয় ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে। বিশ্বব্যাংক প্রথম ডলারের ভিত্তিতে দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণ করেছিল। এতে দেখা হয় যে একই পরিমাণ পণ্য ও পরিষেবার হার বিভিন্ন দেশে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে কি না। ১৯৮৫ সালের দামের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক প্রতিদিন মাথাপিছু ১ ডলার আয়কে ভিত্তি করে ৬টি দেশকে অত্যন্ত দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
কীভাবে অনুমান করা হয়
কোন অর্থনীতিতে কে দরিদ্র, তা নির্ধারণের জন্য আয়ের স্তরকে একটি কাট-অফ পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৫০ বছর আগে, ১৯৭৫ সালে, যে ব্যক্তির মাসিক বেতন ছিল ১,০০০ টাকা, তাকে দরিদ্র মনে করা হতো না। এর বিপরীতে, আজ যদি কোনো ব্যক্তির দৈনিক আয় ৩৩ টাকা হয়, তবে সে কিছুই কিনতে পারে না। মহানগর থেকে ছোট শহর পর্যন্ত সব জায়গায় মূল্যবৃদ্ধি ব্যাপক।
দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকার তাদের জনকল্যাণমূলক নীতি ও প্রকল্প তৈরির জন্য দারিদ্র্যের মূল্যায়ন করে। ভারত সরকার হয় বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যসীমাকে ভিত্তি করে অথবা নীতি আয়োগের বহুমুখী দারিদ্র্য সূচক ব্যবহার করে।
ভারতের নিজস্ব মূল্যায়ন
২০০৯ সালের ফর্মুলার ভিত্তিতে অর্থনীতিবিদ সুরেশ টেন্ডুলকার ২০১১-১২ সালে দারিদ্র্যসীমা নিয়ে তাঁর সুপারিশ পেশ করেন, যা কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করে। এরপর থেকে এই ব্যবস্থাটি আপডেট করা হয়নি। সরকার বিশ্বব্যাংক দ্বারা নির্ধারিত দারিদ্র্যসীমার ওপর নির্ভরশীল। যখন সারা বিশ্বে মূল্যবৃদ্ধি বাড়ল, তখন বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্যসীমা প্রতিদিন ১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩ ডলার করে দিল। ভারতে টেন্ডুলকার কমিটির রিপোর্ট আসার আগে, শহরাঞ্চলে একজন ব্যক্তির দৈনিক আয় ১৭ টাকা এবং গ্রামাঞ্চলে ১২ টাকা তাকে দরিদ্র হিসেবে গণ্য করার ভিত্তি ছিল। ২০০৯ সালে টেন্ডুলকার এটিকে যথাক্রমে ২৯ এবং ২২ টাকা করেন। এরপর ২০১১-১২ সালে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৩৬ এবং ৩০ টাকা করা হয়। ২০১৪ সালে রঙ্গরাজন কমিটি শহরাঞ্চলে প্রতিদিন মাথাপিছু ৪৭ টাকা এবং গ্রামাঞ্চলে ৩৩ টাকা দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণ করে।
অর্থনীতিবিদদের মতামত
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একটি শক্তিশালী এবং হালনাগাদ দেশীয় দারিদ্র্যসীমার অভাবে ভারতের দারিদ্র্যের অনুমান পরিবর্তিত হতে থাকে। ডেটা সংগ্রহে ঘাটতি এবং পরিবর্তনও এর একটি কারণ। দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের পদ্ধতি একই নয়, তাই পার্থক্য দেখা যায়। ভারতে কোটি কোটি মানুষ নিম্ন আয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। দেশের কোটি কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিতে হয়। এটি দেশের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার অবস্থা। ৮৩ শতাংশ ভারতীয় প্রতিদিন ১৭১ টাকায় জীবনধারণ করতে বাধ্য। যদি মানুষের আয় বাড়ে, তবে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে এবং এর ফলে শিল্পের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।