যুদ্ধবিরতি হতেই দ্রুত মিশনে ইরান, ১২ দিনের যুদ্ধেও ধ্বংস করতে পারল না আমেরিকা ও ইসরায়েল?

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের পর ইরানীয় সেনাবাহিনী যে নতুন হুমকি জারি করেছে, তা সরাসরি ইসরায়েল ও আমেরিকার জন্য। স্যাটেলাইট ছবি থেকে জানা গেছে যে, যুদ্ধবিরতির ৩ দিন পরই ইরান তার ৩টি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্রে পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করেছে।
এই তথ্য হোয়াইট হাউসে পৌঁছালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। ট্রাম্প আবারও ঘোষণা করেছেন যে, যদি ইরান আবার পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার অস্তিত্ব মুছে দেওয়া হবে।
যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে আরব বিশ্বে এবার মহাযুদ্ধ শুরু হতে চলেছে। নতুন এই খোলার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে যে, ইসরায়েল এবং আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক অবস্থানে আবারও হামলা করতে পারে।
যুদ্ধবিরতির ৩ দিন পর ইরান আবার সক্রিয়
যদি পরবর্তী হামলা হয়, তাহলে এটি এমন একটি হামলা হতে পারে, যা আরব অঞ্চলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করতে পারে। আরব বিশ্বে ব্যাপক ধ্বংসের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে, কারণ যুদ্ধবিরতির মাত্র তিন দিন পরই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আবার শুরু হয়েছে।
গত সংঘাতে ইসরায়েল এবং আমেরিকা ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধ্বংস করতে পারেনি। তাই ইরান তার ৩টি বড় পারমাণবিক কেন্দ্র ইস্ফাহান, ফোরদো এবং নাতাঞ্জে কাজ শুরু করেছে। ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিই মহাযুদ্ধের কারণ হতে পারে।
স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করছে সত্য
ইরানের পারমাণবিক মিশন পুনরায় শুরু হয়েছে, এর প্রমাণ স্যাটেলাইট ছবি থেকে মিলেছে। স্যাটেলাইট ছবি দেখাচ্ছে যে, ইস্ফাহান নিউক্লিয়ার সেন্টারে কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাম দিকের প্রথম ছবিটি ২৬ জুনের, যখন ডান দিকের ছবিটি ২৭ জুনের। ২৬ জুন পর্যন্ত ইস্ফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রের প্রবেশপথ বন্ধ ছিল, কিন্তু ২৭ জুন এটি আবার খুলে যায়। এর অর্থ হলো ইস্ফাহান সেন্টারে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু হয়েছে।
এবার এই স্যাটেলাইট ছবিটি দেখুন। এটি ফোরদো নিউক্লিয়ার সেন্টারের ছবি। এই ফোরদো সেন্টারে আমেরিকা বাঙ্কার বাস্টার বোমা দিয়ে হামলা করেছিল। এখন এখানে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। ছবিতে খনন এবং মেরামতের জন্য বড় বড় মেশিন দেখা যাচ্ছে।
আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল
ফোরদো নিউক্লিয়ার সেন্টারের স্যাটেলাইট ছবি থেকে বোঝা যায় যে, ফোরদোর উপরের অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত দেখাচ্ছে। এর আশেপাশে অনেক মেশিন এবং গাড়ি দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ হলো ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে।
এদিকে, ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি মিডিয়া তাদের রিপোর্টে দাবি করেছিল যে, ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রেও কাজ শুরু হয়েছে। মাত্র তিন দিনেই ইরানের পারমাণবিক অভিযান শুরু হয়েছে, কারণ তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সুরক্ষিত আছে।
আমেরিকা স্বীকার করেছে যে ইস্ফাহানে GBU-57 বাঙ্কার বাস্টার বোমা দিয়ে হামলা করা হয়নি, কারণ মাটির ২০০ মিটার নিচে এই বোমা বিস্ফোরিত হতে কার্যকর নয়। আমেরিকার জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ জেনারেল ডেন কেন মার্কিন সাংসদকে জানিয়েছেন যে, আমেরিকা ইরানের ইস্ফাহান সেন্টারে GBU-57 বাঙ্কার বাস্টার বোমা দিয়ে হামলা করেনি, কারণ সেটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারত না।
মার্কিন বিমান বাহিনী ফোরদো এবং নাতাঞ্জে B-2 বোমারু বিমান থেকে GBU-57 বাঙ্কার বাস্টার ফেলেছিল। এখানে হামলা করে আমেরিকা তাদের GBU-57 বোমার পরীক্ষাও করে নিয়েছে।
অন্যদিকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি যে গোপন তথ্য পেয়েছে, সে অনুযায়ী ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো ক্ষতি হয়নি। তার সমস্ত ৪০৮ কেজি ইউরেনিয়াম সুরক্ষিত আছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেকোনো মূল্যে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির উপর নজরদারি করতে চান। ট্রাম্প আইএইএ (IAEA) বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে ইরানি পারমাণবিক অবস্থানগুলি পরীক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু ইরান এর জন্য প্রস্তুত নয়।
‘আমরা অবশ্যই হামলা করব’: ট্রাম্প
যখন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আপনি কি চান যে আইএইএ ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির উপর নজরদারি করুক? এর উত্তরে প্রেসিডেন্ট বলেন, “হ্যাঁ। আইএইএ বা আমরা যাকে পাঠাই, যার মধ্যে আমেরিকাও অন্তর্ভুক্ত।”
এখন প্রশ্ন হলো, যদি ইরান তার পারমাণবিক কেন্দ্রের উপর নজরদারি করতে না দেয়, যদি সে তার পারমাণবিক মিশন চালিয়ে যায়, তাহলে ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? সাংবাদিকরা যখন এই প্রশ্ন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তিনি এর সরাসরি এবং সুনির্দিষ্ট জবাব দিলেন। ট্রাম্প বললেন, “কোনো সন্দেহ ছাড়াই। অবশ্যই হামলা করব।”
আরব অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়তে পারে
এ অবস্থায় ট্রাম্প এখন পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, যদি ইরান না মানে, তাহলে আমেরিকা এবং ইসরায়েল আবার ইরানের উপর হামলা শুরু করবে এবং এর সঙ্গেই আরব বিশ্বে সেই যুদ্ধ শুরু হবে, যা কেউ কল্পনাও করেনি। ইরানের উপর আবারও হামলার ঝুঁকি বেড়ে গেছে কারণ সে তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, ইরান আইএইএকে সহযোগিতা না করার ঘোষণাও দিয়েছে।
এমনকি মনে করা হচ্ছে যে ইরান পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তি (Nuclear Non-Proliferation Treaty) থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আমেরিকা ইরানের আশেপাশে আবার সেনা মোতায়েন বাড়াতে শুরু করেছে। আমেরিকা কাতারের আল-উদৈদ এয়ারবেসে (Al-Udeid Airbase) তেল ট্যাঙ্কার এয়ারক্রাফট পাঠিয়েছে। এর পাশাপাশি আমেরিকা তার নাগরিকদের ইরান ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই সব কারণই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, যুদ্ধবিরতি দ্রুত ভেঙে যেতে চলেছে। ইরানের উপর শীঘ্রই হামলার দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু হতে পারে। এটি এমন একটি বারুদের সংঘাত হবে, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের রূপ নিতে পারে।