৬ মাসের দীর্ঘ ‘যুদ্ধ’ শেষে ভারতের ঐতিহাসিক জয়! আমেরিকা ও চীনকে পিছনে ফেলে বিশ্বকে তাক লাগালো ভারত

গত কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে অনেক ধরনের ‘যুদ্ধ’ দেখা গেছে। সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত দেখা গেছে, যেখানে পরে আমেরিকাও জড়িয়ে পড়ে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার ফলস্বরূপ চীন ও আমেরিকার মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ শুরু হয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাত তো আমরা সবাই দেখছি। ভারতের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ও কোনো যুদ্ধের চেয়ে কম ছিল না। এই সমস্ত সংঘাতের মধ্যেই গত ৬ মাস ধরে তিনটি দেশের মধ্যে আরও একটি ‘যুদ্ধ’ চলছিল।
শেয়ার বাজারের রণাঙ্গনে ভারতের বিজয়
বছরের প্রথমার্ধ প্রায় শেষ হতে চলেছে, আর এই ‘যুদ্ধে’ এখন পর্যন্ত ভারতের জয় সুস্পষ্ট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ‘যুদ্ধে’ ভারত বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতিকে পরাজিত করেছে। এর মানে হলো, ভারত আমেরিকা এবং চীন উভয়কেই খারাপভাবে হারিয়েছে। আসুন জেনে নিই, ভারত, আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে আসলে কেমন ‘যুদ্ধ’ চলছিল এবং কীভাবে ভারত উভয় দেশকে পরাজিত করলো।
গত ৬ মাস ধরে ভারত, আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে একটি ত্রিমুখী ‘যুদ্ধ’ চলছিল। এই ‘যুদ্ধের’ রণক্ষেত্র ছিল শেয়ারবাজার, যেখানে ভারত বাজিমাত করেছে। বছরের প্রথমার্ধে ভারতের শেয়ারবাজার আমেরিকা এবং চীনের স্টক এক্সচেঞ্জকে ধুলো চটিয়ে দিয়েছে। যেখানে ভারতের শেয়ারবাজারে প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে, সেখানে আমেরিকা এবং চীনের শেয়ারবাজারে মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি, আমেরিকা-চীন শুল্ক যুদ্ধ, ভারতের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মতো অস্থির সময়েও ভারত তার শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আমেরিকান এবং চীনা বাজারের তুলনায় বেশি রিটার্ন দিয়েছে।
ভারতের বাজারের পারফরম্যান্স
গত ৬ মাসে অর্থাৎ চলতি বছরে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (BSE) প্রধান সূচক সেনসেক্স বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৭ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। এর মানে হলো, সেনসেক্সে ৫,৩৭১.১৯ পয়েন্টের বৃদ্ধি দেখা গেছে। যদিও মাসের শেষ ট্রেডিং দিনে সেনসেক্সে প্রায় ৪০০ পয়েন্টের পতন দেখা যাচ্ছে এবং এটি ৮৩,৬৮৩.৪৩ পয়েন্টে লেনদেন করছে। অন্যদিকে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (NSE) প্রধান সূচক নিফটি ৫০ চলতি বছরে প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মানে হলো, নিফটিতে ১,৮৪৯.৫৫ পয়েন্টের বৃদ্ধি দেখা গেছে। সোমবার নিফটি প্রায় ৫০ পয়েন্টের পতন নিয়ে ২৫,৫৯২.৪৫ পয়েন্টে লেনদেন করছে।
আমেরিকা ও চীনের বাজারের রিটার্ন
অন্যদিকে, আমেরিকা এবং চীনের বাজারগুলো বিনিয়োগকারীদের ভারতের তুলনায় তেমন বেশি রিটার্ন দিতে পারেনি। আমেরিকান বাজার ডাও জোনস ইনডেক্স চলতি বছরে ৩.৩৭ শতাংশ অর্থাৎ ১,৪২৭ পয়েন্টের বৃদ্ধি দেখেছে। অন্যদিকে, নাসডাক কম্পোজিট ৫.১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৯৯২.৬৭ পয়েন্টের বৃদ্ধি পেয়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০-তেও বৃদ্ধি দেখা গেছে, তবে তা ততটা নয়। তথ্য অনুযায়ী, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ বিনিয়োগকারীদের ৫.১৯ শতাংশ অর্থাৎ ৩০৪.৫২ পয়েন্টের বৃদ্ধি দিয়েছে। অন্যদিকে, চীনের প্রধান এক্সচেঞ্জ এসএসআই কম্পোজিট চলতি বছরে ৫.৬৩ শতাংশ অর্থাৎ ১৮৩.৮০ পয়েন্টের বৃদ্ধি দেখেছে। জাপানের নিক্কেই-এ মাত্র ৩ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।
গত তিন মাসের উত্থান
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গত তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে ভালো বৃদ্ধি দেখা গেছে। এই সময়ে সেনসেক্সে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এর প্রধান কারণ হলো ভারতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে ১,১৬,৫৭৪ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল, যার কারণে শেয়ারবাজারে বড় পতন দেখা যাচ্ছিল। অন্যদিকে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এফআইআই (FII) শেয়ারবাজারে ৩২,৯৯৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। যার প্রভাব শেয়ারবাজারে বৃদ্ধির রূপে দেখা গেছে। তবে সামগ্রিকভাবে দেখলে, চলতি বছরে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে ৮৩,৫৭৬ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।