ভারতের ফার্মা সেক্টর কি সত্যিই ডুবে যাচ্ছে? বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ছে, শেয়ারের দাম কমছে!

ভারতের ফার্মা সেক্টর কি সত্যিই ডুবে যাচ্ছে? বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ছে, শেয়ারের দাম কমছে!

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ভারতের ফার্মা সেক্টর মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে। যেখানে নিফটি ৫০ সূচক প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে নিফটি ফার্মা সূচকে ৬ শতাংশেরও বেশি পতন দেখা গেছে। এর মানে হল যে, ফার্মা সেক্টর বাজারের সবচেয়ে খারাপ পারফর্মিং সেক্টরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার কারণে এই সেক্টর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে।

বড় বড় ফার্মা কো ম্পা নির শেয়ারের পতন
এই পতন প্রায় পুরো সেক্টর জুড়ে দেখা গেছে। ন্যাটকো ফার্মা (Natco Pharma)-এর স্টক প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে গেছে, যা সবচেয়ে বড় পতন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আইপিসিএ ল্যাবস (IPCA Labs)-এও ২০ শতাংশের বেশি পতন দেখা গেছে। অরবিন্ন্দো ফার্মা (Aurobindo Pharma), লুপিন (Lupin), গ্র্যানিউলস ইন্ডিয়া (Granules India), ম্যানকাইন্ড ফার্মা (Mankind Pharma), আজন্তা ফার্মা (Ajanta Pharma) এবং অ্যালকেম ল্যাবস (Alkem Labs)-এর শেয়ারও ১২ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে কমেছে। এমনকি বায়োকন (Biocon), সিপলা (Cipla), ড. রেড্ডি’স (Dr. Reddy’s), জেবি কেমিক্যালস (JB Chemicals) এবং সান ফার্মা (Sun Pharma)-এর মতো শক্তিশালী কো ম্পা নিগুলোও ক্ষতির শিকার হয়েছে।

কিছু কো ম্পা নির শক্তিশালী পারফরম্যান্স
তবে এই কঠিন সময়েও কিছু ফার্মা কো ম্পা নি ভালো পারফর্ম করেছে। লরাস ল্যাবস (Laurus Labs) ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে, যখন অ্যাবট ইন্ডিয়া (Abbott India) ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিভি’স ল্যাবস (Divi’s Labs) এবং গ্লেনমার্ক ফার্মা (Glenmark Pharma)-ও ১০ শতাংশ এবং ৮.৬ শতাংশ বৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়াও, টরেন্ট ফার্মা (Torrent Pharma) এবং জাইডাস লাইফ (Zydus Life)-এর মতো কো ম্পা নিগুলোও সামান্য লাভ করেছে।

পতনের কারণ কী?
ফার্মা সেক্টরের এই পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (FII) ব্যাপক বিক্রয় এই সেক্টরকে আঘাত করেছে, বিশেষ করে রপ্তানিমুখী কো ম্পা নিগুলোকে। দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, আমেরিকা-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা এবং উচ্চ সুদের হার।

সবচেয়ে বড় ভয় মার্কিন নীতির নিয়ে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এপ্রিল এবং জুন মাসে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যগুলির উপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ আরোপ করতে পারেন। যেহেতু ভারতের অনেক কো ম্পা নি আমেরিকায় জেনেরিক এবং স্পেশালিটি ওষুধ রপ্তানি করে, তাই এই নীতি তাদের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

নুভামা (Nuvama) রিপোর্ট থেকে কী বোঝা যাচ্ছে?
ব্রোকারেজ ফার্ম নুভামা ইনস্টিটিউশনাল ইক্যুইটিজ (Nuvama Institutional Equities) তাদের রিপোর্টে বলেছে যে, বড় ফার্মা কো ম্পা নিগুলো মার্কিন নীতি এবং তাদের প্রোডাক্ট মিক্স নিয়ে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে, কো ম্পা নিটি আরও বলেছে যে, কিছু ক্ষেত্র যেমন CDMO (Contract Development and Manufacturing Organizations) এবং GLP-1 ওষুধ বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।

সিপলা (Cipla)-এর মতো কো ম্পা নিগুলোর শক্তিশালী প্রোডাক্ট পাইপলাইন, যার মধ্যে gAbraxane এবং gSymbicort-এর মতো পণ্য রয়েছে, বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ কমাতে পারে। অন্যদিকে, CDMO সেক্টরে আরতি ফার্মাল্যাবস (Aarti Pharmalabs), ডিভি’স (Divi’s) এবং ড. রেড্ডি’স (Dr. Reddy’s)-এর মতো কো ম্পা নিগুলো ভালো সাড়া পাচ্ছে।

হেলথকেয়ার সেক্টরে ইতিবাচকতা বজায় রয়েছে
নুভামা (Nuvama) মনে করে যে, হেলথকেয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেক্টরে বৃদ্ধির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। লক্ষ্মী ডেন্টাল (Laxmi Dental), জুপিটার লাইফলাইন (Jupiter Lifeline), সুরক্ষা (Suraksha), অ্যাস্টার ডিএম (Aster DM) এবং জীনা শিখো (Jeena Sikho)-এর মতো কো ম্পা নিগুলো হাসপাতালের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে এবং ডিজিটাল টুলসে বিনিয়োগ করছে। এতে আগামী সময়ে রাজস্ব এবং মুনাফা উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতির আশা করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *