১৮০ বছর পর ঐতিহাসিক সফরে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রধানমন্ত্রী মোদি, যে দেশে প্রথম পা রেখেছিল ভারতীয়রাই!

১৮০ বছর পর ঐতিহাসিক সফরে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রধানমন্ত্রী মোদি, যে দেশে প্রথম পা রেখেছিল ভারতীয়রাই!

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আট দিনের মধ্যে পাঁচটি দেশ সফরে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ৩ ও ৪ জুলাই তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর এক ঐতিহাসিক সফরে রওনা হবেন। ১৯৯৯ সালের পর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর হতে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদির এটিই এই দেশে প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর হবে। ক্যারিবীয় এই দেশে মোদির সফর নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ১৮০ বছর আগে ভারতীয়রা সমুদ্রপথে প্রথমবারের মতো এই ভূমিতে পা রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির এই সফরকে ঘিরে প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক
সোমবার মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নিনা মালহোত্রা জানান, এই সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর রাষ্ট্রপতি ক্রিস্টিন কার্লা কাঙ্গালু এবং প্রধানমন্ত্রী কমলা প্রসাদ-বিসেসরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি দেশটির সংসদের যৌথ অধিবেশনেও ভাষণ দেবেন। এই ঐতিহাসিক সফরে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময়েরও আয়োজন করা হবে। এই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫% ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

ভাগ্যের সন্ধানে যাত্রা শুরু
প্রায় ১৮০ বছর আগে, ১৮৪৫ সালের ৩০শে মে, ভারত থেকে যাত্রা শুরু করা ‘ফতেহ-আল-রাজ্জাক’ নামক জাহাজটি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর উপকূলে ২২৫ জন ভারতীয় চুক্তিবদ্ধ শ্রমিককে নামিয়েছিল। ভারতীয়দের এই দেশটিতে এটিই ছিল প্রথম আগমন। এই শ্রমিকদের ব্রিটিশ উপনিবেশে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। তখন হয়তো কেউ ভাবেনি যে একদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই ভূমিতে একটি আনুষ্ঠানিক সফরে আসবেন।

ব্রিটিশ শাসনকালে চিনি এবং ক্যারিবীয় আখের বাগানে সস্তা শ্রমের জন্য ভারত থেকে শ্রমিক পাঠানো হতো। ‘ফতেহ-আল-রাজ্জাক’ জাহাজে করে ত্রিনিদাদে পৌঁছানো প্রথম ভারতীয়দের বেশিরভাগই উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের গ্রামীণ অঞ্চল থেকে এসেছিলেন।

ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন দিশা
প্রধানমন্ত্রী মোদির এই সফরটি আরও বিশেষ, কারণ ক্যারিবীয় দেশটির রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উভয়ই ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী, এবং তারা নিজেদেরকে “ভারতের কন্যা” বলে অভিহিত করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, উভয় নেত্রী কেবল ভারতের ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত নন, বরং ভারতের সাথে কূটনৈতিক এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতাকে নতুন দিশা দিতে আগ্রহী।

প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের সময় উভয় দেশের মধ্যে ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ফার্মাসিউটিক্যালস, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও, খেলাধুলা, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কও আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “উভয় দেশ একটি বিস্তারিত সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।”

প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সংসদে যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার বিশেষ সম্মান জানানো হবে। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী কমলা বিসেসর প্রধানমন্ত্রী মোদির সম্মানে একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজেরও আয়োজন করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *