কেন পালিত হয় বিশ্ব অ্যাস্টেরয়েড দিবস? ১৯০৮ সালের এই দিনেই ঘটেছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা

বিশ্ব প্রতি বছর ৩০ জুন তারিখটিকে বিশ্ব অ্যাস্টেরয়েড দিবস (World Asteroid Day) হিসেবে পালন করে, যা ১৯০৮ সালের এই দিনে রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় ঘটে যাওয়া একটি বিশাল অ্যাস্টেরয়েড বিস্ফোরণের ঘটনাকে স্মরণ করে। এই ঘটনাটি পৃথিবীর সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অ্যাস্টেরয়েড প্রভাব হিসাবে বিবেচিত হয়, যা প্রায় ২,০০০ বর্গ কিলোমিটার বনভূমিকে সমতল করে দিয়েছিল এবং ১৮৫টি হিরোশিমা বোমার সমান শক্তি উৎপন্ন করেছিল।
১৯ বছর পর ঘটনাটিতে মনোযোগ দেওয়া হয়
ঘটনাটি অনেক দূরে হওয়ায় রাশিয়া এবং বিশ্বব্যাপী তাৎক্ষণিকভাবে এই দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়নি। ঘটনার প্রায় ১৯ বছর পর ১৯২৭ সাল পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দেরীতে হলেও, এই অভিযান অ্যাস্টেরয়েডের প্রভাবের ব্যাপক প্রমাণ খুঁজে পায়, যার মধ্যে শক ওয়েভ থেকে ক্ষতি এবং তাপ বিস্ফোরণের প্রভাব অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্ব অ্যাস্টেরয়েড দিবসের উদ্দেশ্য হল অ্যাস্টেরয়েড ঝুঁকি এবং প্রভাবের বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করা। এটি মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সচেতনতা অ্যাস্টেরয়েড সনাক্তকরণ, ট্র্যাকিং এবং বিচ্যুতি (deflection) জন্য কৌশল বিকাশেও সাহায্য করে। এই বছর বিশ্ব অ্যাস্টেরয়েড দিবসের ১০ম বার্ষিকী উদযাপন করছে।
জাতিসংঘ সচেতনতার জন্য একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রস্তাব A/RES/71/90 গ্রহণ করে, যার অধীনে অ্যাস্টেরয়েড প্রভাব সচেতনতার বৈশ্বিক গুরুত্ব এবং সম্ভাব্য বিপদ প্রতিরোধের জন্য সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে ৩০ জুনকে আন্তর্জাতিক অ্যাস্টেরয়েড দিবস ঘোষণা করা হয়। সাধারণ পরিষদ এই সিদ্ধান্ত অ্যাসোসিয়েশন অফ স্পেস এক্সপ্লোরারস-এর একটি প্রস্তাবের পর নেয়, যা আউটার স্পেসের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার কমিটি (COPUOS) দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল।
অ্যাস্টেরয়েড সচেতনতার আন্তর্জাতিক বছর
জাতিসংঘ ২০২৯ সালকে অ্যাস্টেরয়েড সচেতনতা এবং গ্রহ প্রতিরক্ষা আন্তর্জাতিক বছর হিসাবে ঘোষণা করেছে। এটি অ্যাস্টেরয়েড ৯৯৯৪২ অ্যাপোফিস (Apophis)-এর পৃথিবীর কাছাকাছি আসার ঘটনার সাথে যুক্ত। ১৩ এপ্রিল, ২০২৯ তারিখে অ্যাপোফিস পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৩২,০০০ কিলোমিটারের মধ্যে দিয়ে নিরাপদে অতিক্রম করবে, যা কিছু ভূ-স্থির উপগ্রহের চেয়েও কাছাকাছি। এটি ইউরোপ, আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার কিছু অংশে খালি চোখে দেখা যাবে।
অ্যাপোফিস-এর ব্যাস প্রায় ৩৪০ মিটার, যা প্রায় তিনটি ফুটবল মাঠের আকারের সমান। এটি বর্তমানে প্রতি ৩২৩ দিনে একবার সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে, কিন্তু ২০২৯ সালের পর এর কক্ষপথ পরিবর্তিত হবে। অ্যাপোফিস আকাশে একটি উজ্জ্বল, দ্রুত গতিশীল আলোর বিন্দু হিসাবে দেখা যাবে। এর এই কাছাকাছি আসা বিজ্ঞানীদের অ্যাস্টেরয়েড অধ্যয়ন করার একটি বিরল সুযোগ প্রদান করে।
নাসার ডার্ট মিশন (DART Mission)
নাসা ইতিমধ্যেই তাদের ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট (DART) মহাকাশ মিশনের মাধ্যমে গ্রহ প্রতিরক্ষা কৌশল পরীক্ষা করেছে। ডার্ট মিশন ছিল প্রথম মিশন যার উদ্দেশ্য ছিল গতিশীল প্রভাবক প্রযুক্তি (kinetic impactor technique) প্রদর্শন করা, যা ইচ্ছাকৃতভাবে মহাকাশযানকে অ্যাস্টেরয়েডের সাথে সংঘর্ষ ঘটিয়ে সেগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার একটি পদ্ধতি।