ভারতীয় রাগ শুধু মন ছুঁয়ে যায় না, মস্তিষ্কের তরঙ্গও বদলে দেয়, আইআইটি মান্ডির গবেষণায় চাঞ্চল্যকর ফলাফল

ভারতীয় রাগ শুধু মন ছুঁয়ে যায় না, মস্তিষ্কের তরঙ্গও বদলে দেয়, আইআইটি মান্ডির গবেষণায় চাঞ্চল্যকর ফলাফল

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আত্মিক সুর এখন আর শুধু অনুভূতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং বিজ্ঞানের পরীক্ষাগারেও তার উপস্থিতি প্রমাণ করেছে। ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান (IIT) মান্ডির নিউরোসায়েন্স অধ্যয়ন প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় রাগ শুধু মনকে স্পর্শ করে না, বরং মস্তিষ্কের গভীরেও স্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন ঘটায়।

ইউএসএ-র ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্স’-এ প্রকাশিত এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন আইআইটি মান্ডির পরিচালক প্রো. লক্ষ্মীধর বেহেরা। এতে আইআইটি কানপুরের গবেষকরাও সহযোগিতা করেছেন। এই গবেষণায় আধুনিক ইইজি মাইক্রোস্টেট বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে ৪০ জন অংশগ্রহণকারীর মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই কৌশল মস্তিষ্কের অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং ক্ষণস্থায়ী অবস্থাগুলো রেকর্ড করে, যা বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করে যে কোন রাগ মস্তিষ্কের কোন কার্যকলাপকে সক্রিয় বা শান্ত করে।

ফলাফল ছিল চমকপ্রদ ও অনুপ্রেরণাদায়ক
রাগ দরবারী, যা তার শান্ত এবং স্থির প্রভাবের জন্য পরিচিত, তা মনোযোগ এবং একাগ্রতার সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের অবস্থাগুলিকে সক্রিয় করেছে এবং মনের বিক্ষিপ্ততা হ্রাস করেছে। অন্যদিকে, রাগ জোগিয়া, যা আবেগগত গভীরতা ধারণ করে, তা আবেগিক নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখিয়েছে।

প্রো. বেহেরা বলেছেন যে, এটি অত্যন্ত অলৌকিক যে ভারতীয় রাগগুলি শত শত বছর ধরে যে মানসিক স্থিতিশীলতার কথা বলে আসছে, তা এখন বিজ্ঞানের মানদণ্ডেও প্রমাণিত হচ্ছে। এই গবেষণার প্রধান লেখক ডা. আশীষ গুপ্তও স্পষ্ট করেছেন যে পরিবর্তনগুলি আকস্মিক ছিল না, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে পুনরাবৃত্তিযোগ্য ছিল। এর মাধ্যমে এটিও প্রমাণিত হয় যে, সঙ্গীতকে মানসিক স্বাস্থ্যের একটি প্রভাবশালী, অ-ওষুধ নির্ভর চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দেওয়া হয়েছে
পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার বা উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আগে রাগ দরবারী শোনা একাগ্রতা বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, আবেগিক সংকটের সময় রাগ জোগিয়া শোনা আবেগিক ভারসাম্য প্রদান করতে পারে। আইআইটি কানপুরের প্রো. ব্রজভূষণও এই আবিষ্কারকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এটি সঙ্গীতভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য হস্তক্ষেপের জন্য সাংস্কৃতিকভাবে অনুকূল কৌশলগুলির পথ প্রশস্ত করবে। বিশেষ বিষয় হল, এই পরীক্ষা পশ্চিমা অংশগ্রহণকারীদের উপরেও করা হয়েছিল এবং ফলাফল প্রায় একই পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারতীয় রাগগুলির শব্দ তরঙ্গের প্রভাব কেবল সাংস্কৃতিক নয়, বরং তাদের স্নায়বিক শক্তি সর্বজনীনও।

এই গবেষণা কেবল বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির মধ্যে ব্যবধান পূরণ করে না, বরং এই বার্তাও দেয় যে আমাদের সাংস্কৃতিক শিকড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের সমাধান ইতিমধ্যেই বিদ্যমান, শুধুমাত্র আমাদের সেগুলিকে বুঝতে এবং গ্রহণ করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *