ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির আগে বড় ঘোষণা, হোয়াইট হাউস বলল, ‘মোদি-ট্রাম্পের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক’

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে একটি বড় খবর সামনে এসেছে। হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে যে এই চুক্তি সম্পর্কে শীঘ্রই একটি বড় ঘোষণা হতে পারে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন ল্যাভিট বলেছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার বাণিজ্য দল এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে এবং তা বজায় থাকবে। এই চুক্তি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চমৎকার সম্পর্ক’
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন ল্যাভিট একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে ভারতের সাথে একটি বড় বাণিজ্যিক চুক্তি হতে চলেছে, এবং এই কথাটি সঠিক। আমি সম্প্রতি আমাদের বাণিজ্য সচিবের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি, যিনি প্রেসিডেন্টের সাথে ওভাল অফিসে এই চুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। শীঘ্রই প্রেসিডেন্ট এবং তার বাণিজ্য দলের পক্ষ থেকে ভারতের সাথে এই চুক্তি সম্পর্কে আপডেট পাওয়া যাবে।’ তিনি আরও যোগ করেছেন যে, ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চমৎকার সম্পর্ক এই চুক্তিকে আরও শক্তিশালী করবে।
বাণিজ্য চুক্তির সময়সীমা এবং লক্ষ্য
উল্লেখ্য, এই বাণিজ্য চুক্তি একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির অংশ, যা ৯ জুলাই, ২০২৫-এর মধ্যে সম্পূর্ণ করা জরুরি। এর কারণ হলো, এই তারিখের পর আমেরিকা কর্তৃক ঘোষিত ২৬% নতুন শুল্ক কার্যকর হবে, যা ভারতীয় রপ্তানিকে প্রভাবিত করতে পারে। এই অন্তর্বর্তী চুক্তি বছরের শেষ নাগাদ একটি ব্যাপক চুক্তির পথ পরিষ্কার করবে। এর কাঠামোটি নিম্নরূপ:
অন্তর্বর্তী চুক্তির সময়সীমা: ৯ জুলাই, ২০২৫
সম্পূর্ণ চুক্তির লক্ষ্য: ডিসেম্বর ২০২৫
বাণিজ্যিক লক্ষ্য: ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য
উভয় দেশের দাবি ও চ্যালেঞ্জ
এই বাণিজ্য চুক্তিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে কিছু বিষয়ে সম্মতি তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমেরিকা এবং ভারতের দাবিগুলি নিম্নরূপ:
আমেরিকার দাবি:
ভারতে কৃষি এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারে প্রবেশাধিকার।
ইলেকট্রিক যান এবং অটোমোবাইল বাজারে প্রবেশ।
জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (GM) ফসল, যেমন সয়াবিন এবং ভুট্টার জন্য বাজার উন্মুক্ত করা।
বাদাম, আপেল, আখরোট এবং ওয়াইনের মতো পণ্যগুলিতে শুল্ক হ্রাস।
ভারতের অবস্থান:
ভারতীয় কৃষক এবং ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (MSP) ব্যবস্থার সুরক্ষা।
আমেরিকা কর্তৃক স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং অটো পার্টসের উপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস।
শ্রম-নিবিড় ক্ষেত্র যেমন টেক্সটাইল, রত্ন-গহনা, চামড়া এবং ওষুধের জন্য উন্নত বাজার প্রবেশাধিকার।
প্রধান বাধা:
GM ফসল এবং দুগ্ধজাত পণ্যগুলিতে ভারতের কঠোর অবস্থান, কারণ এই ক্ষেত্রগুলি ভারতীয় কৃষক এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের জন্য সংবেদনশীল।
অটো পার্টস এবং খাদ্যদ্রব্যের উপর শুল্ক নিয়ে মতবিরোধ।
ভারতের প্রস্তাব:
মার্কিন বাদাম, এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) এবং অটো পার্টসের উপর শুল্কের ছাড়।
৯০% মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস, যা পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে।
ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের গুরুত্ব
ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ইতিমধ্যেই শক্তিশালী। ২০২৪-২৫ সালে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ১৩১.৮৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, যেখানে আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ভারত ইতিমধ্যেই চিংড়ি, হাই-এন্ড মোটরসাইকেল এবং কিছু ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মতো কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়েছে। মনে করা হচ্ছে যে, এই চুক্তি কেবল উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে না, বরং ভারত ও আমেরিকার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও বৃদ্ধি করবে।