ব্রাহ্মোস নিয়ে পাকিস্তানের আকাঙ্ক্ষা এবং ভারতের জবাব, “বিনামূল্যেও এখন আর পাবে না!”

দুবাই ডিফেন্স শো-তে (Dubai Defence Show) যখন বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর সুপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ব্রাহ্মোস’ নিয়ে আলোচনা চলছিল, তখন সেখানে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল যা গুরুতর পরিবেশকে কিছুক্ষণের জন্য হালকা করে তুলেছিল। তবে একই সাথে এটি একটি কঠোর বার্তাও দিয়ে গেছে।
ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান বিজ্ঞানী ড. এপিজে সিভাত্থানু পিল্লাই সম্প্রতি একটি পডকাস্টে এই আকর্ষণীয় ঘটনাটি শেয়ার করেছেন। তিনি জানান, দুবাই শো চলাকালীন একজন পাকিস্তানি জেনারেল তাকে প্রশ্ন করেন, “ভারত কি পাকিস্তানকে ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করবে?” এই কথা শুনে ড. পিল্লাই মুচকি হেসে উত্তর দেন, “পাকিস্তানের জন্য তো বিনামূল্যেও দিয়ে দেব!” এই কথা বলার সাথে সাথেই সেখানে উপস্থিত সবাই হেসে ওঠে। কিন্তু এই উত্তরটি কেবল একটি কৌতুক ছিল না, এটি ছিল ভারতের কৌশলগত স্পষ্টতা এবং আত্মবিশ্বাসের ইঙ্গিত।
ব্রাহ্মোস: শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ভারতের সামরিক পরিচয়
ব্রাহ্মোস কেবল একটি অস্ত্র নয়, এটি ভারতের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনার প্রতীক। এর বিশেষত্ব হলো:
সুপারসোনিক গতি: প্রায় ২.৮ থেকে ৩.০ ম্যাক (৩০০০ কিমি/ঘণ্টার বেশি)।
উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্ম: এটি স্থল, সমুদ্র, আকাশ এবং ডুবোজাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা যায়।
অব্যর্থ লক্ষ্য: মাত্র ১-২ মিটারের ত্রুটি সীমা, অর্থাৎ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের জন্য একদম নিখুঁত।
ব্রাহ্মোস ভারতের ডিআরডিও (DRDO) এবং রাশিয়ার এনপিও মাশিনোস্ট্রোয়েনিয়া (NPO Mashinostroyenia)-এর অংশীদারিত্বে নির্মিত হয়েছে। প্রথমে এর পাল্লা ছিল ২৯০ কিমি, কিন্তু এখন নতুন সংস্করণগুলি ৮০০ কিমি পর্যন্ত এবং ভবিষ্যতে ১৫০০ কিমি পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হবে।
‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ব্রাহ্মোসের শক্তির প্রদর্শন
সম্প্রতি যখন পহেলগামে পাকিস্তান-পৃষ্ঠপোষকিত সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, তখন ভারত জবাব দিয়েছিল – অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে। এই অপারেশনে ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তান এবং পিওকে (PoK)-এর সন্ত্রাসী আস্তানাগুলিতে হামলা চালানো হয়। এর মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে, ব্রাহ্মোস কেবল কাগজে-কলমের শক্তি নয়, এটি বাস্তব সামরিক পদক্ষেপের একটি অস্ত্র।
পাকিস্তানের আশা, ভারতের নীতি
পাকিস্তানি জেনারেলের প্রশ্নটি যতই সরল মনে হোক না কেন, এর উত্তর ভারতের কৌশলগত স্থিতিশীলতার একটি উদাহরণ। ভারত তাদের এমন অস্ত্রশস্ত্র এমন কোনো দেশের কাছে বিক্রি বা ভাগ করে নেওয়ার কথা ভাবতেও পারে না, যারা বছরের পর বছর ধরে সন্ত্রাসবাদকে লালন-পালন করে ব্যবহার করেছে। ড. পিল্লাইয়ের উত্তরটি কৌতুকপূর্ণ হলেও, এর মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির গভীরতা নিহিত। ব্রাহ্মোস পাকিস্তানের জন্য কোনো চুক্তির অংশ নয়, এমনকি কোনো সম্পর্কের সম্ভাবনাও নয়।