আইএনএস তামাল-এর ভয়ে পাকিস্তানের ঘুম হারাম! ভারতের এই নতুন যুদ্ধজাহাজের বিশেষত্ব কী?

আইএনএস তামাল-এর ভয়ে পাকিস্তানের ঘুম হারাম! ভারতের এই নতুন যুদ্ধজাহাজের বিশেষত্ব কী?

ভারতীয় নৌবাহিনী আজ, মঙ্গলবার একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ শহরে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ আইএনএস তামাল (INS Tamal) আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হতে চলেছে। এই যুদ্ধজাহাজ সমুদ্রে দেশের শত্রুদের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে উঠবে। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে ভারতীয় পশ্চিম নৌ কমান্ডের প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল সঞ্জয় জে. সিং উপস্থিত থাকবেন। ভারত ও রাশিয়ার যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত এই যুদ্ধজাহাজে ৩৩ শতাংশ দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। আইএনএস তামালকে পশ্চিম নৌ কমান্ডে মোতায়েন করা হবে, যা আরব সাগর এবং পাকিস্তানের করাচি বন্দরের কাছে ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করবে।

‘তামাল’-এর অর্থ কী?
আইএনএস তামাল নামটি পৌরাণিক কাহিনীতে দেবরাজ ইন্দ্রের শক্তিশালী তরবারি ‘তামাল’ থেকে অনুপ্রাণিত। এই যুদ্ধজাহাজের প্রতীকী চিহ্ন রামায়ণের মহান যোদ্ধা জাম্ববান্ট এবং রাশিয়ান বাদামী ভালুক (ব্রাউন বিয়ার)-এর এক অনন্য সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতীকটি ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতিফলন ঘটায়। এই যুদ্ধজাহাজের সৈন্যরা নিজেদের ‘দ্য গ্রেট বিয়ার্স’ বলে পরিচয় দেয়। এর মূলমন্ত্র ‘সর্বদা সর্বত্র বিজয়’ অর্থাৎ ‘সব জায়গায়, সব সময় জয়’ এর অদম্য স্পৃহাকে তুলে ধরে।

আইএনএস তামালের ভয়ে কেন পাকিস্তানের ঘুম ছুটেছে?
আইএনএস তামাল একটি স্টিলথ মাল্টিরোল যুদ্ধজাহাজ, যা রাডারের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি কেবল প্রযুক্তিগতভাবে উন্নতই নয়, বরং এর গতি, অস্ত্রশস্ত্র এবং কৌশলগত ক্ষমতার কারণে সমুদ্রে এটি একটি বিপজ্জনক প্রহরী। আর এই কারণেই পাকিস্তানের ঘুম হারাম হয়েছে। আসুন, এর কিছু বিশেষত্ব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

প্রশিক্ষিত যোদ্ধা: আইএনএস তামালে ২৫০ জনেরও বেশি সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে, যারা রাশিয়ার তীব্র শীতকালে কঠোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এই সৈন্যরা যেকোনো পরিস্থিতিতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

আকার এবং গতি: এই যুদ্ধজাহাজের দৈর্ঘ্য ১২৫ মিটার এবং ওজন ৩,৯০০ টন। এটি ৩০ নট (প্রায় ৫৫ কিমি/ঘন্টা) এর বেশি গতিতে সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ের মতো শত্রুর দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

মারাত্মক অস্ত্রের ভাণ্ডার: আইএনএস তামাল-এ ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল লাগানো আছে, যা সমুদ্র এবং স্থল উভয় ক্ষেত্রেই নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম। এছাড়াও, এতে রয়েছে ভারী টর্পেডো, সাবমেরিন-বিরোধী রকেট এবং একাধিক উন্নত রাডার, যা এটিকে আরও বেশি মারাত্মক করে তোলে।

আক্রমণ ক্ষমতা: এই যুদ্ধজাহাজটি ১০০ মিলিমিটারের অত্যাধুনিক কামান এবং দ্রুত আক্রমণকারী অ্যান্টি-সাবমেরিন রকেট দিয়ে সজ্জিত, যা সমুদ্রের গভীরে এবং পৃষ্ঠে শত্রুদের ধ্বংস করতে সক্ষম।

হেলিকপ্টার পরিচালনা: আইএনএস তামাল-এ হেলিকপ্টার পরিচালনার সুবিধা রয়েছে, যা এটিকে আকাশ ও সমুদ্র উভয় অপারেশনে বহুমুখী করে তোলে।

আধুনিক প্রযুক্তি: এতে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক ভিত্তিক যুদ্ধ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা এটিকে যুদ্ধের ময়দানে কৌশলগত সুবিধা প্রদান করে।

নিরাপত্তা শক্তি: এই যুদ্ধজাহাজটি শত্রুর সবচেয়ে উন্নত এস-৫০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, যা এটিকে সমুদ্রে প্রায় অপরাজেয় করে তোলে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি
আইএনএস তামাল-এর মোতায়েন ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তিকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করবে। বিশেষ করে আরব সাগরে, যেখানে এই যুদ্ধজাহাজ ভারতের সামুদ্রিক সীমানার প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করবে। পাকিস্তানের করাচি বন্দরের কাছে ভারতের কৌশলগত উপস্থিতি আরও কার্যকর করতে আইএনএস তামালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এর স্টিলথ প্রযুক্তি এবং মারাত্মক অস্ত্র শত্রুদের জন্য একটি বড় হুমকি, যা তাদের কৌশল ব্যর্থ করতে সক্ষম।

ভারত-রাশিয়া সহযোগিতার প্রতীক
আইএনএস তামাল ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কয়েক দশকের পুরোনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আরও একটি দুর্দান্ত উদাহরণ। এই যুদ্ধজাহাজে ৩৩ শতাংশ দেশীয় সরঞ্জামের ব্যবহার কেবল ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকেই তুলে ধরে না, বরং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর স্বপ্নকেও বাস্তবায়িত করে। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত এই যুদ্ধজাহাজ ভারতের দেশীয় প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার এক অনন্য সংমিশ্রণ। ‘সর্বদা সর্বত্র বিজয়’ মন্ত্র নিয়ে এই যুদ্ধজাহাজ সমুদ্রে ভারতের পতাকা উড়িয়ে দেবে এবং শত্রুদের ঘুম কেড়ে নেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *