চাল না কিনলে শুল্ক বসাবো! নিজের বন্ধু দেশ জাপানকে ট্রাম্পের হুমকি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বন্ধু দেশ জাপানকে নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, জাপান আমেরিকান চাল কিনতে অস্বীকার করেছে, অথচ তাদের দেশেই চালের তীব্র সংকট দেখা যাচ্ছে। এই বিবৃতি বিশ্ব বাণিজ্য এবং দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
ট্রাম্প আকার ইঙ্গিতে জাপানকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন যে, জাপানকে শীঘ্রই আমেরিকার পক্ষ থেকে একটি বাণিজ্যিক চিঠি পাঠানো হবে। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এই চিঠি শুল্ক সংক্রান্ত হতে পারে। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “এটা দেখানোর জন্য যে অন্যান্য দেশ আমেরিকার প্রতি কতটা আদর পেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে…. আমি জাপানকে অনেক শ্রদ্ধা করি, তারা আমাদের চাল নেয় না, অথচ তাদের চালের তীব্র সংকট রয়েছে। এর মানে হলো আমরা শুধু তাদের একটি চিঠি পাঠাবো। আমরা বছরের পর বছর ধরে তাদের একটি চমৎকার বাণিজ্যিক অংশীদার মনে করেছি।” সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমেরিকা দ্বারা ঘোষিত ৯০ দিনের পাল্টা শুল্ক স্থগিতের সময়সীমা ৮ জুলাই শেষ হচ্ছে। ট্রাম্প আগেও বলেছিলেন যে তার প্রশাসনিক দল আসন্ন শুল্কের হার সম্পর্কে দেশগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করবে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জাপান সেই দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হতে পারে যা এই নীতির দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে। স্থগিতাদেশের আগে জাজল পণ্যের উপর ২৪% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। বর্তমানে তাদের উপর একটি অভিন্ন ১০% শুল্ক প্রযোজ্য। তবে, ট্রাম্প এখনও এই চিঠির বিষয়বস্তু বা তাতে প্রস্তাবিত সম্ভাব্য নতুন শুল্ক হার সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট তথ্য দেননি।
ট্রাম্প বহু দেশকে হুমকি দিয়েছেন
ট্রাম্পের এই বিবৃতি তার ব্যাপক শুল্ক নীতির একটি অংশ, যার অধীনে তিনি আমেরিকান বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং দেশীয় শিল্পকে बढ़ावा দিতে চেষ্টা করছেন। তিনি এর আগেও চীন, ভারত, কানাডা এবং মেক্সিকোর মতো অনেক দেশের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন। পাল্টা অর্থাৎ রেসিপ্রোকাল শুল্কের অর্থ হল, যদি কোনও দেশ আমেরিকান পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে, তাহলে আমেরিকাও সেই দেশের আমদানির উপর একই শুল্ক আরোপ করবে।
জাপানের প্রসঙ্গে ট্রাম্পের দাবি, জাপান আমেরিকান চালকে তাদের বাজারে প্রবেশাধিকার দিতে অস্বীকার করছে। জাপানে চাল একটি সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ফসল, এবং সেখানে স্থানীয় চাল উৎপাদনকারীদের সুরক্ষার জন্য কঠোর আমদানি নিয়ম প্রযোজ্য। ট্রাম্প এটিকে অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন আখ্যা দিয়ে বলেছেন যে জাপানের আমেরিকান চাল কেনা উচিত, বিশেষ করে যখন সেখানে চালের ঘাটতির খবর সামনে আসছে।
জাপানের অবস্থান
জাপান এখনও ট্রাম্পের এই বিবৃতির উপর কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে জাপানের জন্য আমেরিকান চাল ব্যাপকভাবে আমদানি করা কঠিন হতে পারে, কারণ সেখানকার ভোক্তারা স্থানীয় চালকে অগ্রাধিকার দেয়। এছাড়াও, জাপান এর আগেও আমেরিকান কৃষি পণ্যের উপর কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করেছে, যা ট্রাম্প বারবার অন্যায্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। জাজল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জাপান সম্প্রতি তাদের চালের ঘাটতি মেটাতে তাদের ভান্ডার থেকে চাল ছেড়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের দাবি, তা সত্ত্বেও জাপান আমেরিকান চাল গ্রহণ করতে দ্বিধা করছে।
ট্রাম্পের এই নতুন হুমকি বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। জাপান এবং আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী বাণিজ্যিক অংশীদার, এবং উভয় দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। তবে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এর আগেও অনেক সহযোগী দেশের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ভারতের উপরও উচ্চ শুল্ক আরোপের অভিযোগ করেছিলেন এবং ২ এপ্রিল থেকে রেসিপ্রোকাল শুল্ক কার্যকর করার ঘোষণা করেছিলেন যা পরে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল।