নৌবহরে নতুন তলোয়ার: আইএনএস তামাল, জেনে নিন বিদেশ থেকে আসা এই শেষ যুদ্ধজাহাজের বৈশিষ্ট্য

ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হলো অত্যাধুনিক স্টিলথ ফ্রিগেট আইএনএস তামাল। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদে অবস্থিত ইয়ান্টার শিপইয়ার্ডে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিদেশ থেকে আসা শেষ যুদ্ধজাহাজ এটি।
এরপর নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়া সব যুদ্ধজাহাজ ভারতেই তৈরি হবে। এখন থেকে সমস্ত জাহাজ ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের অধীনে দেশীয় ডকইয়ার্ডে তৈরি করা হবে।
আইএনএস তামাল কেবল একটি যুদ্ধজাহাজ নয়, এর কৌশলগত সক্ষমতার কারণে এটি একটি গেম চেঞ্জার প্রমাণিত হবে। এতে ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, দীর্ঘপাল্লার উল্লম্ব উৎক্ষেপণযোগ্য ভূমি থেকে বায়ু ক্ষেপণাস্ত্র, ১০০ মিমি প্রধান কামান, ৩০ মিমি সিআইডব্লিউএস, সাবমেরিন-বিরোধী রকেট এবং হেভিওয়েট টর্পেডোর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে।
একবারে ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম
এই জাহাজটি ৩০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৫৫ কিমি/ঘণ্টা) গতিতে চলতে পারে এবং একবারে ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। স্টিলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত হওয়ায় এটি শত্রুর রাডারে ধরা পড়বে না। এর ওজন ৩৯০০ টন এবং এতে ২৫০ জন নৌসেনা এবং ২৬ জন কর্মকর্তা মোতায়েন থাকবেন। আইএনএস তামাল কামোভ-২৮ এবং কামোভ-৩১ হেলিকপ্টারও বহন করতে সক্ষম, যা সাবমেরিন-বিরোধী এবং বিমান নজরদারি অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, এই যুদ্ধজাহাজ পারমাণবিক, জৈবিক এবং রাসায়নিক (NBC) যুদ্ধ থেকে সুরক্ষার জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা এবং অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থায় সজ্জিত।
এই জাহাজটি ভারতীয় ও রুশ প্রযুক্তির সমন্বয়। এতে নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক যুদ্ধ ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার এবং ইও/আইআর সেন্সর স্থাপন করা হয়েছে। এর কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সমস্ত অস্ত্র এবং সেন্সরকে একত্রিত করে এটিকে একটি মারাত্মক যুদ্ধযন্ত্রে পরিণত করেছে। যদিও এটি রাশিয়ায় তৈরি হয়েছে, তবুও এতে ২৬% দেশীয় সরঞ্জাম রয়েছে – যার মধ্যে ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এবং হামসা-এনজি সোনার সিস্টেমের মতো প্রধান অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত।
এই শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজগুলি ভবিষ্যতে ভারতে নির্মিত হবে
এই শ্রেণীর আসন্ন দুটি যুদ্ধজাহাজ ভারতে নির্মিত হবে, যা ভারত-রাশিয়ার যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরও জোরদার করবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে চারটি ‘তলোয়ার-ক্লাস’ স্টিলথ ফ্রিগেট তৈরির জন্য চুক্তি হয়েছিল, যার মধ্যে দুটি রাশিয়ায় এবং দুটি ভারতে তৈরি হওয়ার কথা ছিল। রাশিয়ায় তৈরি প্রথম যুদ্ধজাহাজ আইএনএস তুশিলকে ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়ায় গিয়ে নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এখন দ্বিতীয় জাহাজ আইএনএস তামাল নৌবাহিনীর অংশ হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতের গোয়া শিপইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে দুটি স্টিলথ ফ্রিগেট, যার নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এর মধ্যে প্রথম যুদ্ধজাহাজ ত্রিপুটকে সামুদ্রিক পরীক্ষার জন্য জলে নামানো হয়েছে, এবং দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজের নাম তবসিয়া রাখা হয়েছে।
আইএনএস তামাল একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ
সত্যি বলতে, আইএনএস তামাল একটি সামুদ্রিক দুর্ভেদ্য দুর্গ। এটি একটি অত্যাধুনিক ব্লু ওয়াটার স্টিলথ ফ্রিগেট, যা সামুদ্রিক যুদ্ধের চারটি মাত্রা – বায়ু, পৃষ্ঠ, জলতলে এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ – মোকাবিলায় সক্ষম।
‘তামাল’ এক প্রকারের তলোয়ারকে বলা হয় এবং এই যুদ্ধজাহাজও তার তীক্ষ্ণ মারণক্ষমতা দিয়ে তারই প্রতীক। এর আগমনে আরব সাগরে চীন ও পাকিস্তানে স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। বিশেষ বিষয় হলো, এই যুদ্ধজাহাজ গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। এর মূল মন্ত্র হলো – “সর্বত্র সর্বদা বিজয়” – অর্থাৎ, প্রতিটি স্থান, প্রতিটি সময়ে বিজয়, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর মূল ভাবনাকে প্রতিফলিত করে।